Posted in খেয়াল করুন, জেনে রাখুন, দেশ ও জাতির প্রতি দ্বায়বদ্ধতা, ভালো লাগা, ভালোবাসা

বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ৭[ক])


তারিখ: ৩১শে-মার্চ-২০১২ইং

অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে “উইন্ডোজ” অপারেটিং সিস্টেম কে আমি “খিড়কী” বা “জানালা” নামে ডাকতেই স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করি। আমার এ লেখায়ও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ব্যক্তিগতভাবে কেউ যদি লেখাটা পড়ে আহত হোন বা কষ্ট পেয়ে থাকেন তো সেইজন্যে আমি আন্তরিকভাবেই দুঃখিত। কিন্তু করার ও তো কিছু নেই। আমার লেখায় যদি আমিই শান্তি না পাই তো লিখবো কি করে‍‍? এই কাজটুকু করাই হতো না যদি না “প্রজন্ম ফোরাম” আর “উবুন্টু বাংলাদেশ” এর মেইলিং লিস্টে কিছু মানুষের ভুল ধারনা কে ভেঙ্গে দিতে কিছু কঠিন মন্তব্য না করতাম আর সেখানে আমাদের গৌতম দা আমাকে এই বিষয়ে বিশদভাবে লেখার জন্য উৎসাহ না দিতেন। গৌতম রয় কে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার ভেতরের আমি কে টেনে-হেঁচড়ে বের করে নিয়ে আসবার জন্য।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই লেখাটি আমি পর্ব আকারে বিগত ২৯শে ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী প্রতিটি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে প্রকাশ করে আসছিলাম। হৃদযন্ত্রে গোলোযোগ আর মস্তিষ্কের জমাট বেঁধে থাকা রক্তের কারনে শারীরিকভাবে কিছুটা দূর্বল থাকায় কিছু পঞ্চম পর্ব থেকেই পূর্বের স্বনির্ধারিত সূচী অনুযায়ী লেখাগুলো প্রকাশ করতে পারিনি। এমনকি বিগত ১৬ই ফেব্রুয়ারীতে এই লেখার ষষ্ঠ পর্ব প্রকাশ করে আপনাদেরকে জানিয়েছিলাম যত দ্রুত পারি বাকী পর্বগুলো (সপ্তম ও অষ্টম) প্রকাশ করবো। কিন্তু আমার “ময়ূরপঙ্খী নাও” আমাকে যে নির্দিষ্ট ঘাটে নোঙ্গর করতেই দিচ্ছে না। আর তাই এই দীর্ঘ সময় আপনাদেরকে অপেক্ষায় রেখে দেয়ায় আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ২৭শে ফেব্রুয়ারীতে প্রকাশিত হবার অপেক্ষায় থাকা সেই সপ্তম পর্বের লেখাটির প্রথম খন্ড (৭[ক])আজ প্রকাশ করতে পারলাম। আপনার আগ্রহ থাকলে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ পর্বের লেখাগুলো একটু সময় করে পড়ে নিতে পারেন।

আজকের লেখায় আমি, মাইক্রোসফট কর্তৃক ৭। ব্যবহারকারীর নিরাপত্তার প্রতি হুমকি (Threatening user security)নিয়ে যথা সম্ভব সহজ এবং বোধগম্য ভাষায় কিছু বিষয় সকল প্রযুক্তিপ্রেমিক আর প্রযুক্তি পন্য ব্যবহারকারীদের সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। আশা রাখি আজকের এ পর্বের লেখার মাধ্যমে কিছু বিষয়ে আপনাদের মনে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারবো এবং আগামীদিনে প্রযুক্তি জীবনের পথ চলায় এটা আপনার পাথেয় হবে।

প্রযুক্তি জগতে প্রযুক্তি’র ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা বলতে একজন সাধারন ব্যবহারকারীর তথ্যের নিরাপত্তাকেই বোঝায়। সহজ ভাষায় আরেকটু বিস্তারিত আকারে বলতে গেলে আমরা প্রতিনিয়ত কম্পিউটার সহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পন্যে যে সকল সফটওয়্যার/অপারেটিং সিস্টেম/টুলস ব্যবহার করি সেগুলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ব্যবহারকারীর বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ/ব্যবহার করে থাকে। সেই তথ্যগুলো যদি নিরাপদে সংরক্ষিত/ব্যবহৃত হয় এবং প্রযুক্ত পন্য ব্যবহারে ব্যবহারকারীর স্বাধীনতা কে কোনভাবে খর্ব না করে তো সেটাই হলো প্রযুক্তি জগতে একজন ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা।

প্রযুক্তি জগতে প্রযুক্তি’র ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা কে দেবে? তা নিশ্চয়ই এখন আপনাদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে। একেবারে সোজা সাপ্টা বললে এই নিরাপত্তা বিধান করার সর্বময় ক্ষমতাটুকু রয়েছে প্রযুক্তি পন্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। যেহেতু একটি প্রযুক্তি পন্যের ভোক্তা হলেন সাধারন ব্যবহারকারীগন তাই তাঁরা এটাকে শুধুমাত্র ব্যবহারই করে থাকেন। এর বাইরে খুব সহজে তাঁদের কিছু করার থাকে না। আর ব্যবহার করার সময় প্রযুক্তি পন্যের আচরন বা কাজের ধরনটুকু পূর্বনির্ধারিতই থাকে। আর সেই নির্ধারনের কাজটুকু সম্পাদিত হয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে। তাই প্রযুক্তিপন্যের সফটওয়্যার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটিই মূলত এই নিরাপত্তা বিধানের কাজের নিশ্চয়তাটুকু দিয়ে থাকে সাধারন ব্যবহারকারীদের। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য হার্ডওয়্যার বা যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানেরও কিছু দ্বায়িত্ব থেকে থাকে সাধারন ব্যবহারকারীদের প্রযুক্তি পন্যের ব্যবহারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।

নিরাপত্তার প্রতি হুমকিতে মাইক্রোসফট কেন/কিভাবে শীর্ষে? প্রশ্নটার উত্তর জানতে হলে আপনাকে খুব সতর্কভাবে কিছু বিষয়ের প্রতি নজর দিতে হবে। প্রযুক্তির পন্যের নিরাপত্তায় যেহেতু সফটওয়্যারের ভূমিকাই মূখ্য এবং এক্ষেত্রে সফটওয়্যার জগতে মাইক্রোসফট কে আমরা তালিকার শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেই পাচ্ছি। কিন্তু আর দশটা প্রতিষ্ঠানের দিকে আঙ্গুল না তুলে আমার লেখা মাইক্রোসফটের প্রতিই নির্দেশ করছে কেন? কারন এই প্রতিষ্ঠানের জনপ্রিয় পন্যগুলোর মধ্যে অপারেটিং সিস্টেম ঘরানার পন্যগুলো ব্যবহারকারীর তথ্য নিরাপত্তায় এক বিরাট হুমকিস্বরূপ। কিভাবে তা জানতে হলে আসুন আমরা কিছু বিষয়ে সচেতন এবং সতর্কভাবে মনোযোগী হই।

‘খিড়কী’ ঘরানায় মাইক্রোসফটের প্রথম জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম ছিলো “খিড়কী ৯৮” বা “জানালা ৯৮” বা “উইন্ডোজ’৯৮”। নামকরনের স্বার্থকতা পূর্ন একশত ভাগ রয়েছে এই ওএসটিতে। সিস্টেম সেটাপ করে চালু হবার পরপরই মজার খেলা দেখতে পারবেন। যদি আপনি লগইন স্ক্রীনে আপনার সুরক্ষা পাসওয়ার্ড দেন তো লগিইন করতে পারবেন আবার যদি পাসওয়ার্ড না দেন তো তবুও সিস্টেমের পূর্ন ব্যবহার করবার অধিকার পাবেন। মানে যে দরজা দিযে আপনাকে সিস্টেমে আপনাকে প্রবেশ করতে নির্দেশনা দেয়া আছে তা মেনে চলবার কোনই দরকার নাই। কেননা দরজার সাথে সাথে এই বাড়ীতে প্রবেশের জন্য আপনারা পাচ্ছেন “৯৮টি জানালা”। এঁর যে কোনটি দিয়েই আপনি যখন খুশি, যেভাবে খুশি এই বাড়ীতে প্রবেশ করতে পারবেন এবং যা মনে চায় তাই করতে পারবেন। মানে আপনার কম্পিউটারে আপনার সকল তথ্যের নিরাপত্তায় মাইক্রোসফটের এই মহান উদ্যোগ কোনক্রমেই আপনি ভুলতে পারবেন না। আর যদি একান্তই মন ভোলা হয়ে থাকেন তো নিশ্চিত থাকেন যে, কোন ক্র্যাকার আপনার সিস্টেমকে এইরূপ কড়া সুরক্ষা বুহ্যের আড়ালে দেখতে পেলে আনন্দেই তাঁর হৃদযন্ত্রের দু’একটা বিট মিস হয়ে যাবে। 😀 😀 😀

“জানালা ৯৮” বা “উইন্ডোজ ৯৮” এর পরপরই বাজারে আসে মাইক্রোসফটের “খিড়কী নেংটি” বা “উইন্ডোজ এনটি”। বাচ্চাদের নেংটি যেমন বারে বারে বদলাতে হয় এই ওএসটি তারচাইতে ঘনঘন সিস্টেমের সমস্যা সমাধান করতে করতে প্রযুক্তিবিদদের দফারফা হয়ে গিয়েছিলো। বিদ্যুৎজনিত সমস্যায় দুমদাম এর কার্নেল লোডার (ntldr) সিস্টেমের রেফারেন্স থেকে হারিয়ে যেতো। সাথে বিটকেলে এক সমস্যা — FAT32 ফাইলসিস্টেম নিয়ে কাজ করতে না পারলেও এই সিস্টেম FAT16 ও NTFS ফাইলসিস্টেম নিয়ে কাজ করতে পারতো। ফলে “৯৮টি জানালা”র ব্যবহারকারীরা এই সংস্করনের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে এসে “দরজা-জানালা” সব হারিয়ে বসে। এর কিছুদিন পরেই “মিলেনিয়াম খিড়কী” বা “উইন্ডোজ এমই” নিয়ে এসেছিলো মাইক্রোসফট তবে এটাও এই নেংটির মতোই ঘনঘন অদল-বদল এবং গন্ডগোল করায় ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে সাড়া পেতে ব্যর্থ হয়। তবে যাই করুক আর তাই করুক নিরাপত্তাজনিত ত্রুটিগুলো কিন্তু বজায় রাখতে ভোলেনি মাইক্রোসফট। 😉

এরপর মাইক্রোসফট “এক্সপি” শিরোনামে নিয়ে আসে নতুন এক ওএস। ফলাফল কিন্তু যেই লাউ সেই কদুই। যেহেতু “এক্সপি” শিরোনামে এই ওএস এর নামকরন তাই আগের মতো জানালাগুলো আর দৃশ্যমান নেই। তবে এবারে সে গোপন কিছু জানালা খুলে রাখলো নিজের সিস্টেমের অভ্যন্তরীন ব্যবস্থায়। যেগুলোর মাধ্যমে মাইক্রোসফট নিজে আপনার পিসি ইন্টারনেটে যুক্ত হওয়া মাত্র আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরির কাজ করতে পারে। দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে মাইক্রোসফটের এহেন নীচ কর্মকান্ড প্রযুক্তিবিদদের নজর এড়ালো না এবং এই অপরাধটায় আদালতে দোষী প্রমানিত হওয়ায় মাইক্রোসফটকে জরিমানাও করা হলো। তবে তাঁর এই অপরাধ প্রবনতা কিন্তু তাতেও রহিত করা যায়নি। বরংচ ভিন্ন নামে ভিন্ন আঙ্গিকে “জানালা” সিস্টেমের ভেতরের জানালা চালু রাখায় মাইক্রোসফটকে নিজের সংসদ থেকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতে বাধ্য হলো জার্মানীর সরকার। ফরাসী পুলিশ কর্তৃপক্ষ ও একই পথে হাঁটলো। তাঁদের এই দৃষ্টান্ত অনুসরন করলো পশ্চিমা বিশ্বের প্রায় সবগুলো দেশই। আরো জানতে চাইলে দেখতে পারেন — http://www.suaju.com/software-news/german-government-warns-not-to-use-internet-explorer-until-microsoft-issues-a-patch/198 এবং http://news.bbc.co.uk/2/hi/8463516.stm লিংক দুটি।

এরপরে মাইক্রোসফট নতুন এক চেহারায় নতুন আঙ্গিকে বাজারে নিয়ে আসলো “উইন্ডোজ ভিস্তা” বা “ভেস্তে যাওয়া জানালা”। আসলে ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপলকে টেক্কা দেবার সর্বোচ্চ আশা নিয়ে মাইক্রোসফট এই পন্যটা বাজারে আনে। যদিও পন্যের মান কিংবা গুন কোনটাই অ্যাপলের ধারে কাছে ছিলো না। এবং খুব অল্প সময়েই মাইক্রোসফটের এই নতুন পন্য বাজারে মুখ থুবড়ে পড়ে। আর এই কারনেই এঁকে আমি “ভেস্তে যাওয়া জানালা” বলে থাকি। বিশেষ লক্ষনীয় যে এই “জানলা” সিস্টেমের মধ্যে মাইক্রোসফট অতি সন্তর্পনে নিজের সেই ব্যবহারকারীর তথ্য চুরির নেশা ত্যাগ না করে বরংচ আরো বর্ধিত আকারে বিস্তার করতে চেষ্টা করে এবং চুরি করার প্রযুক্তিটির নামে পরিবর্তন আনে। আগের NSA_Key এবারে প্রযুক্তিবিদদের সার্চ লাইটে ধরা পড়ে যায় key2 নামে।

“সপ্তম জানালা” বা “উইন্ডোজ ৭” । যতই মনভোলা আর গালফোলা নামকরনই হোক না কেন কাজের ধরন কিন্তু সেই পুরোনোই। এবং সিস্টেমের সিকিউরিটি যতই উচ্চমার্গীয় বলে মাইক্রোসফট প্রচার করুক না কেন এই পন্য মাইক্রোসফটের অাগের পন্যগুলোর মতোই ত্রুটিপূর্ন বলে ধরা পড়ে। মজার বিষয় হলো আগের সিস্টেমগুলো FAT ফাইল সিস্টেমে সাপোর্ট দিলেও এই “খিড়কী” কোনমতেই NTFS ছাড়া সিস্টেম লোড করতে পারে না। মানে বাধ্যতামূলকভাবে একজন ব্যবহারকারীকে নিজের পূর্বের সফটওয়্যারগুলোর মায়া কাটিয়ে বাধ্যতামূলকভাবেই ঐ সফটওয়্যারগুলোর নতুন সংস্করনে আপগ্রেড করে আসতে হয়।

এই সবগুলো ওএস এই কিন্তু প্রচুর ‘ব্যাকডোর’ যুক্ত করা ছিলো যেগুলোর ব্যবহারে ক্র্যাকাররা বিশ্বের প্রচুর ব্যবহারকারীর তথ্যের ক্ষতিসাধন করেছেন। বর্তমান সময়ে (ভেস্তে যাওয়া জানালা এবং সপ্তম জানালা) মাইক্রোসফট নিজের ওএস পন্যের সাথে সাথে “উইন্ডোজ ডিফেন্ডার” বা “জানালা রক্ষাকারী” নামের টুলস দিয়ে দিচ্ছে। যদিওবা এইটিকে মনভোলা নামে ডাকা হচ্ছে কিন্তু এঁর লাইসেন্সটুকু পড়লেই বুঝতে পারবেন যে কিভাবে এইটি আপনার কাছ থেকে আপনার সকল ব্যক্তিগত তথ্যের অধিকার নিয়ে নিচ্ছে এবং পরবর্তীতে সিস্টেমের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আড়ালে আপনার ঐ তথ্যগুলো ট্র্যাক বা খুঁজে নিয়ে আর্কাইভ করে যাচ্ছে। এছাড়াও দেখুন http://www.focus.com/fyi/50-places-linux-running-you-might-not-expect লিংক দুটি। এছাড়াও উইকিপিডিয়াতেও বেশ কিছু তথ্য পাবেন।

প্রযুক্তি জগতের নিয়মনীতি কে থোড়াই কেয়ার করে ফাইল ব্রাউজারের সাথে ওয়েব ব্রাউজারকে ইন্টিগ্রেট করার কারনেই অতি সহজেই ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে ক্র্যাকাররা এই সিস্টেমের দখল নিতে পারে। কিন্তু তবুও একটার পর একটা সংস্করনে একই ব্যবসায়িক নীতি ধরে রেখে এগুচ্ছে মাইক্রোসফট এবং এর খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারন ব্যবহারকারীরাই। একইভাবে ওয়েবব্রাউজারের দুনিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখতে গিয়ে মাইক্রোসফট পন্যের বিপননে যে শঠতার আশ্রয় নিচ্ছে সেইজন্যে মাইক্রোসফটকে আদালতে শাস্তিও পেতে হয়েছে।

আর চরম মজার কাহিনী হলো এই যে এই খিড়কী গুলোর প্রতিটিতেই ফাইল সিস্টেমের সাপোর্ট আপগ্রেড হয়ে এসেছে কিন্তু পূর্ববর্তী ফাইলসিস্টেমটিতেই নতুন সিস্টেমটি ব্যবহারের কোন ব্যবস্থাই ফলপ্রসুভাবে কার্যকরী ছিলো না। ফলে ব্যবহারকারীকে নিজ গুরুত্বপূর্ন তথ্য/নথিপত্রের ক্ষতির সাথে সাথে অনেক তথ্য/নথিপত্র হারাতেও হয়েছে। মাইক্রোসফটের এন্ড ইউজার লাইসেন্স এগ্রিমেন্ট বা EULA তে মাইক্রোসফট আপনাকে কি সুবিধা দিচ্ছে বা নিরাপত্তা দিচ্ছে সেক্ষেত্রে একটু মনোযোগ দিলেই দেখতে পাবেন ফ্রী ওয়্যার বা বিনামূল্যে যে সফটগুলো পাওয়া যায় (উন্মুক্ত বা মুক্ত নয় কেননা সোর্স কোড সহ অন্যান্য শর্ত গুলো পূরন করে না এগুলো) সেগুলোর মতোই মোটামুটি ভাষার ব্যবহার করেছে মাইক্রোসফট। অর্থাৎ আপনাকে নিজ দ্বায়িত্বেই এই ওএসগুলো ব্যবহার করতে হবে কোন রূপ তথ্য হারানো কিংবা বিকৃতির জন্য মাইক্রোসফটকে আপনি কোনমতেই দায়ী করতে পারবেন না।

এবার নিশ্চয়ই আর ছেলেখেলা বা নিছক আনন্দচ্ছলে নিচ্ছেন না বিষয়গুলোকে। নিশ্চয়ই বোধের মূলে খটাখট আঘাত হানছে চিন্তা বা বিবেক কুড়াল? আশা করি কিছুটা হলেও বুঝতে পারছেন যে ব্যবহারকারীর তথ্যের নিরাপত্তায় হুমকি স্বরূপ কেন মাইক্রোসফটের নামটাকে এত বেশী উচ্চারন করে যাচ্ছি।

. . . . . এই পর্বটি “পর্ব – ৭[খ]” তে সমাপ্য . . .

বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ৭[খ]) প্রকাশিত হবে শীঘ্রই।

বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ১) প্রকাশিত হয়েছিলো বিগত ২৯শে ডিসেম্বর ২০১১ইং, বৃহস্পতিবার রাত্রে।
বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ২) প্রকাশিত হয়েছিলো বিগত ৫ই জানুয়ারী ২০১২ইং, বৃহস্পতিবার রাত্রে।
বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ৩) প্রকাশিত হয়েছিলো বিগত ১২ই জানুয়ারী ২০১২ইং, বৃহস্পতিবার রাত্রে।
বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ৪) প্রকাশিত হয়েছিলো বিগত ১৯শে জানুয়ারী ২০১২ইং, বৃহস্পতিবার রাত্রে।
বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ৫) প্রকাশিত হয়েছিলো বিগত ৩১শে জানুয়ারী ২০১২ইং, মঙ্গলবার রাত্রে।
বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ৬) প্রকাশিত হয়েছিলো বিগত ১৬ই ফেব্রুয়ারী ২০১২ইং, শুক্রবার রাত্রে।

Posted in খেয়াল করুন, জেনে রাখুন, দেশ ও জাতির প্রতি দ্বায়বদ্ধতা, ভালো লাগা, ভালোবাসা

বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ৬)


তারিখ: ১৬ই-ফেব্রুয়ারী-২০১২ইং

অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে “উইন্ডোজ” অপারেটিং সিস্টেম কে আমি “খিড়কী” বা “জানালা” নামে ডাকতেই স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করি। আমার এ লেখায়ও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ব্যক্তিগতভাবে কেউ যদি লেখাটা পড়ে আহত হোন বা কষ্ট পেয়ে থাকেন তো সেইজন্যে আমি আন্তরিকভাবেই দুঃখিত। কিন্তু করার ও তো কিছু নেই। আমার লেখায় যদি আমিই শান্তি না পাই তো লিখবো কি করে‍‍? এই কাজটুকু করাই হতো না যদি না “প্রজন্ম ফোরাম” আর “উবুন্টু বাংলাদেশ” এর মেইলিং লিস্টে কিছু মানুষের ভুল ধারনা কে ভেঙ্গে দিতে কিছু কঠিন মন্তব্য না করতাম আর সেখানে আমাদের গৌতম দা আমাকে এই বিষয়ে বিশদভাবে লেখার জন্য উৎসাহ না দিতেন। গৌতম রয় কে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার ভেতরের আমি কে টেনে-হেঁচড়ে বের করে নিয়ে আসবার জন্য।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই লেখাটি আমি পর্ব আকারে বিগত ২৯শে ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী প্রতিটি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে প্রকাশ করে আসছিলাম। হৃদযন্ত্রে গোলোযোগ আর মস্তিষ্কের জমাট বেঁধে থাকা রক্তের কারনে শারীরিকভাবে কিছুটা দূর্বল থাকায় কিছু পর্বের লেখা, আমি পূর্বের স্বনির্ধারিত সূচী অনুযায়ী প্রকাশ করতে পারিনি। বর্তমান অবস্থাও ততটা সুখকর নয়, তবুও চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ লেখার বাকী পর্বগুলো অতিশীঘ্রই প্রকাশ করতে। আজ প্রকাশিত হলো লেখার ষষ্ঠ পর্ব। অষ্টম পর্বে লেখার উপসংহার প্রকাশ করার ইচ্ছে রয়েছে। আপনার আগ্রহ থাকলে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম পর্বের লেখাগুলো একটু সময় করে পড়ে নিতে পারেন।

আজকের লেখায় আমি, মাইক্রোসফট কর্তৃক ৬। ডিজিটাল রেষ্ট্রিকশন ব্যবস্থাপনার বলপূর্বক প্রয়োগ (Enforcing DRM) নিয়ে যথা সম্ভব সহজ এবং বোধগম্য ভাষায় কিছু বিষয় সকল প্রযুক্তিপ্রেমিক আর প্রযুক্তি পন্যের ব্যবহারকারীদের সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। আশা রাখি আজকের এ পর্বের লেখার মাধ্যমে কিছু বিষয়ে আপনাদের মনে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারবো এবং সেটা চিরস্থায়ী রূপে আগামীতে প্রযুক্তি জীবনের পথ চলায় আপনার পাথেয় হবে।

প্রযুক্তির দুনিয়ায় “ডিজিটালাইজেশন বা ডিজিটাল ইজি লাইফ” কি? আপনার পরিচিত/আপনজন/পাড়া প্রতিবেশীদের ছোট্ট শিশুদের সাথে নিশ্চয়ই আপনার সখ্যতা আছে? কিংবা যদি এভাবে বলি যে পাড়ার ছোট্ট শিশুরা আপনাকে খুবই ভালোবাসে কিংবা আপনি তাঁদেরকে খুবই পছন্দ করেন তো বিষয়টা কি খুব খারাপ বলা হয়? নিশ্চয়ই না। ঠিক তেমনি আপনার বাসার টেলিভিশন কিংবা ক্যাবল চ্যানেলে আপনার পছন্দের অনুষ্ঠানটি যদি আপনি চান যে রেকর্ড করে রাখবেন পরবর্তীতে সময়-সুযোগ করে আরামসে দেখবেন বলে সেইটাও যৌক্তিক। আর যদি এই দুটো কাজ — ১. ছোট্ট শিশুদের ভালোবাসা পাওয়া কিংবা দেয়া এবং ২. আপনার পছন্দের কোন কাজ আপনার মতো করে করতে পারা, এগুলো হলো আপনার নৈতিক অধিকার এবং সেটাকে যদি প্রযুক্তির ভাষায় অনুবাদ করি তো, ১. ছোট্ট শিশুদের ভালোবাসা পাওয়া কিংবা দেয়া == আপনার যে কোন প্রযুক্তি পন্যকে নিজ পছন্দ মতো ব্যবহার করতে পারা এবং ২. আপনার পছন্দের কোন কাজ আপনার মতো করে করতে পারা == আপনার কেনা প্রযুক্তিপন্য মেনে চলবে আপনার নির্দেশনা হিসেবে লেখা যেতে পারে। তখন এঁকে বলা হবে “ডিজিটালাইজড ইজি লাইফ” বা “প্রযুক্তির ব্যবহারে আনন্দময়/সহজ জীবন”।

প্রযুক্তির দুনিয়ায় “ডিজিটাল রেষ্ট্রিকশন ব্যবস্থাপনা” কি? কড়া তামাকের গন্ধ যদি হুট করে নাকে এসে লাগে তো নাক ও চোখের ভ্রু যেমনি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কুঁচকে যায় ঠিক তেমনি একটা দশা হয় আমার এই প্রশ্নটার মুখোমুখি হলেই। অতি সহজে যদি বলি তো উপরোক্ত আপনার নৈতিক অধিকারগুলো যদি অনৈতিকভাবে কেড়ে নেয়া / বঞ্চিত করা হয় তো সেটাই “ডিজিটাল রেষ্ট্রিকশন ব্যবস্থাপনা” বা Digital Restriction Management (DRM). এবারে একটু ব্যাখ্যা করি। আপনার পছন্দ ছোট্ট শিশুদের সাথে সময় কাটানো, আর সেক্ষেত্রে যদি সেই শিশু/দের কে আপনার কাছে থেকে দূরে সরিয়ে দেয় সেই শিশুর অভিভাবক/আপনার অভিভাবক/অন্য কেউ তো সেটা আপনার মতে কতটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে একবার ভাবুন তো? আবার যদি আপনার পছন্দের টেলিভিশন অনুষ্ঠানটা সময়ের অভাবে দেখতে না পারেন কিংবা সেটুকু পুষিয়ে নিতে আপনি যদি রেকর্ড করার সুবিধাটুকু সুলভ হবার পরেও ব্যবহার করতে না পারেন তো বিষয়টা কেমন হবে?

দুটো পরিস্থতিতেই আপনি আপনার অধিকার হারাবেন কিন্তু প্রতিরোধে আপনার কিছুই করার থাকবে না। এবং এই সুযোগে কেউ যদি আপনাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখায় / আপনাকে এই সুবিধা পাইয়ে দেবার বিনিময়ে অনৈতিক কিছু সুবিধা দাবী করে তো সেটা দিতেও আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবেন।

কিভাবে “ডিজিটাল রেষ্ট্রিকশন ব্যবস্থাপনা”র বলপূর্বক প্রয়োগ করা হচ্ছে? উপরের যতটুকু আলোচনা করলাম তাতে নিশ্চয়ই বিষয়টা এতক্ষনে আপনার মাথায় কুটকুট করে কামড়াচ্ছে আর সন্দেহ জাগছে যে এতগুলো দিনে আপনি কিভাবে প্রতারনা/প্রলোভনের নির্মম শিকার হয়ে এসেছেন। যদি তারপরেও নিজের মগজের তালা না খুলে থাকে তো জেনে নিন — মাইক্রোসফট তাঁর খিড়কী সিস্টেমের মিডিয়া সেন্টার ব্যবহারকারীদেরকে এনবিসি (NBC) টেলিভিশনের যে কোন অনুষ্ঠানই রেকর্ড করতে বাধা দিয়ে থাকে। এবং এই নিয়ে আইনগত মোকাবিলায় সে ভুলভাবে এফসিসি’র নিয়মের উপস্থাপন করে। পেছনের কারনটা ছিলো অবশ্য এনবিসি টেলিভিশনের সাথে মাইক্রোসফটের একটি গোপন চুক্তি যার মাধ্যমে এনবিসি’র অনুষ্ঠান রেকর্ডিংয়ে বাধা দানের মাধ্যমে মাইক্রোসফট একটা বিরাট অংকের মুনাফা লাভ করছিলো। অবশ্য মাইক্রোসফটের এই চক্রান্ত পরবর্তীতে আদালতে নস্যাৎ হয় এবং আদালত ব্যবহারকারীর অধিকার হরনে এফসিসি’র কোন এখতিয়ার নেই বলে মত দেন। এই ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইলে পড়ে নিন — http://gizmodo.com/391642/microsoft-will-totally-bork-your-media-center-dvr-if-nbc-or-anyone-asks-it-to

মাইক্রোসফটের আরেকটি ধোঁকাবাজি বা ফাঁকি দেয়া সেবা হলো মিউজিক স্টোর এবং এখানেও সেই সাধারন ব্যবহারকারীদের অধিকার অনৈতিকভাবে হরনের মনোলোভা পন্থা। আপনি যদি — http://www.pcpro.co.uk/news/245859/q-a-microsoft-defends-return-to-drm এখান থেকে একটু পড়ে নেন তো জেনে যাবেন যে মাইক্রোসফটের এই সার্ভিসটার উদ্দেশ্যই ছিলো কিভাবে সহজে একজন ব্যবহারকারীকে বোকা বানানো সম্ভব। উন্নত বিশ্বে এবং বর্তমানে আমাদের এই অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল দেশগুলোতেও একজন মুঠোফোনের ব্যবহারকারী সাধারনত প্রতি ছয় মাস অন্তরই হ্যান্ডসেট পাল্টে থাকেন। আর ঠিক এই সুযোগটা নিতেই মাইক্রোসফট এই সেবার নামে ধোঁকাবাজি চালু করে এবং এমন একটা ব্যবস্থা করে রাখে যেনো একটা হ্যান্ডসেটের মাধ্যমে ডাউনলোড করা সংগীত অন্য আরেকটি হ্যান্ডসেটে চলতে না পারে। তারমানে একই গান আপনাকে হয় প্রতিবার হ্যান্ডসেট পাল্টে ফেলার সাথে সাথেই পুনরায় ডাউনলোড করতে হবে অথবা সেই গানটাকে চিরতরে হারাতে হবে। অন্যথায় আপনি চাইলেও আপনার পছন্দের একটা গানের কাছে আটকে থেকে আপনার হ্যান্ডসেট ব্যবহার অনুপযোগী হবার পরেও পরিবর্তন করতে পারবেন না।

এই জোরজবরদস্তি যে শুধু মাইক্রোসফট সাধারন ব্যবহারকারীদের সাথেই করেছে এমনটা নয়। ওঁর নিজের তৈরী জুন প্লেয়ার (Zune Player) টিতেও সে এমন ব্যবস্থা করে রাখে যেনো সেটা মাইক্রোসফটের অনুমোদনবিহীন কোন সাইট থেকে গান/সংগীত নামিয়ে চালাতে না পারে। ফলে এমটিভি’র মতো প্রতিষ্ঠানকেও বাধ্য করা হয় মাইক্রোসফটের সাথে চুক্তিতে আসতে যেনো তাঁদের গান/মিউজিক ভিডিও জুন প্লেয়ারে চলতে পারে। আরো বিস্তারিত জানতে ঘুরে আসুন — http://www.eff.org/deeplinks/2006/09/microsofts-zune-wont-play-protected-windows-media

মাইক্রোসফট তাঁর জুন প্লেয়ারে ভাইরাল ডিআরএম (Viral DRM) নামক একটা প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ফলে ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে যেসব মিডিয়া রিলিজ বা উন্মুক্ত করা হয়েছে সেগুলো যদিও সর্বসাধারনের সাথে শেয়ারযোগ্য তবুও জুন এবং মাইক্রোসফটের মিডিয়া ডিকোডার কপিরাইটেড করে নেয়, যেটা ক্রিয়েটিভ কমন্স চুক্তি/নীতির সম্পূর্ন লংঘন। ফলে আপনি চাইলেও আপনার কোন সৃষ্টিকে আর উন্মুক্ত করে দিতে পারবেন না যদি আপনি চান যে সেটা উইন্ডোজের মিডিয়া সার্ভারে স্ট্রিমিং কিংবা জুন প্লেয়ারে শোনাবার উপাযোগী করা হোক। আরো বিস্তারিত পাবেন — http://www.gearsandwidgets.com/2006/09/15/zunes-viral-drm-wraps-your-personal-content-in-microsoft-drm/

বিএমজি (BMG) মিউজিকের সাথে যৌথচুক্তিতে এসে মাইক্রোসফট রুটকিট (Rootkit) নামক ডিআরএম বা “ডিজিটাল রেষ্ট্রিকশন ব্যবস্থাপনা”র বলপূর্বক প্রয়োগ করে অডিও সিডি সমূহে। ফলে যদিও সিডিগুলো কপি করা থেকে রহিত করা সম্ভব হয় তবুও তাতে করে সিস্টেমে ঝুঁকিপূর্ন সফটওয়্যারের অবৈধ ইন্সটলেশন ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের পথটাও উন্মুক্ত হয়। কেননা রুটকিট প্রযুক্তির ব্যবহার করে বহিরাগত কোন ব্যবহারকারী বা প্রতিষ্ঠান আপনার সিস্টমের নিয়ন্ত্রন আপনার কাছ থেকে নিয়ে নিতে পারে। যার অর্থই হলো আপনার নিজস্ব জীবনাচরনের উপরে অনৈতিক হস্তক্ষেপ। আর জানতে পড়তে পারেন — http://www.f-secure.com/weblog/#00000691

এই যে ঘটনাগুলোর উল্লেখ করলাম সেগুলো যে ঘটেছে এবং ঘটছে তাঁর প্রমান আপনি অনলাইনে ঢুঁ মারলেই পেয়ে যাবেন। এগুলো কি অনৈতিকভাবে আপনার স্বাধীনতা বা পছন্দ-অপছন্দের উপরে হস্তক্ষেপ করা নয়? এগুলো কে কি এখনো আপনি স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই নেবেন। নাকি একজন সচেতন প্রযুক্তি ব্যবহারকারী হিসেবে বলবেন — “ডিজিটাল রেষ্ট্রিকশন ব্যবস্থাপনা”র বলপূর্বক প্রয়োগ

বদ্ধ ঘরের এই তালা ভাঙবার উপায় কি? এগুলোকে প্রতিরোধ করতে হলে আপনাকে নিজেকেই নিজেকে জাগ্রত রাখতে হবে, পড়তে হবে, জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে। প্রযুক্তির দুনিয়ায় ঝিমিয়ে বা ঘুমিয়ে থাকার কোন অবকাশ নেই। যদি সেটা করেন তো নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনবেন। আপনাকেই ঠিক করতে হবে যে আপনার কি করনীয়। মুক্ত প্রযুক্তির দুনিয়ায় বিচরনে অভ্যস্ত হতে হবে। স্বাধীনভাবে সবাই বাঁচতে শেখে না (উদাহরন স্বরুপ বলা যেতে পারে বাবুই আর চড়ুই পাখির জীবনধারন)। যদি আপনি প্রযুক্তির জগতে বন্ধন মুক্ত জীবন পেতে চান তো স্বাধীন আপনাকেই হতে হবে, কেউ এসে করে দিয়ে যাবে না। বর্তমানে সুলভ সুবিধায় কিঞ্চিৎ ছাড়, কিঞ্চিৎ অতিরিক্ত শ্রম আর সুদৃঢ় মনোবলই পারবে প্রযুক্তির দুনিয়ায় আপনাকে মুক্ত ও স্বাধীন করতে আর সেই স্বাধীনতা সুরক্ষা করতে। আমি যে এই ছয়টি পর্ব ধরে লেখার মাধ্যমে চিল্লা-ফাল্লা করেই যাচ্ছি তাঁর প্রধান কারন একটাই – “মুক্তি” বা “স্বাধীনতা”। যদি নিজের প্রযুক্তির জীবনকে স্বাধীন রাখতে চান তো আজই “খিড়কী”র দুনিয়া ছেড়ে বেরিয়ে আসুন “উন্মুক্ত প্রযুক্তির, মুক্ত দুনিয়ায়”।

আমি নিজে এই “স্বাধীনতা”র স্বাদ পেয়েছি আর তাতে বেশ স্বাচ্ছ্যন্দে আর আনন্দেই আছি। এখন নিজের অর্জিত জ্ঞানটুকু দিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে আপনাদেরকেও আহবান করছি “উন্মুক্ত প্রযুক্তির দুনিয়ায়”। এই ডাকে সাড়া দেয়া বা না দেয়া সম্পূর্নই আপনার বিবেচনা। তবে হ্যাঁ আগামীতে আর কখনোই একথা বলতে পারবেন না যে —

“স্বাধীনতার আহ্বান কেউ করেনি, বাড়ায়নিকো হাত,
কপাল খুঁটে মরতে হলো, ছিলো লিখন ললাট।”

বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ৭) প্রকাশিত হবে আগামী ২৭শে ফেব্রুয়ারী ২০১২ইং, সোমবার রাত্রে।

বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ১) প্রকাশিত হয়েছিলো বিগত ২৯শে ডিসেম্বর ২০১১ইং, বৃহস্পতিবার রাত্রে।
বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ২) প্রকাশিত হয়েছিলো বিগত ৫ই জানুয়ারী ২০১২ইং, বৃহস্পতিবার রাত্রে।
বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ৩) প্রকাশিত হয়েছিলো বিগত ১২ই জানুয়ারী ২০১২ইং, বৃহস্পতিবার রাত্রে।
বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ৪) প্রকাশিত হয়েছিলো বিগত ১৯শে জানুয়ারী ২০১২ইং, বৃহস্পতিবার রাত্রে।
বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ৫) প্রকাশিত হয়েছিলো বিগত ৩১শে জানুয়ারী ২০১২ইং, মঙ্গলবার রাত্রে।

Posted in খেয়াল করুন, জেনে রাখুন, দেশ ও জাতির প্রতি দ্বায়বদ্ধতা, ভালো লাগা, ভালোবাসা

বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ৫)


তারিখ: ৩১শে-জানুয়ারী-২০১২ইং

অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে “উইন্ডোজ” অপারেটিং সিস্টেম কে আমি “খিড়কী” বা “জানালা” নামে ডাকতেই স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করি। আমার এ লেখায়ও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ব্যক্তিগতভাবে কেউ যদি লেখাটা পড়ে আহত হোন বা কষ্ট পেয়ে থাকেন তো সেইজন্যে আমি আন্তরিকভাবেই দুঃখিত। কিন্তু করার ও তো কিছু নেই। আমার লেখায় যদি আমিই শান্তি না পাই তো লিখবো কি করে‍‍? এই কাজটুকু করাই হতো না যদি না “প্রজন্ম ফোরাম” আর “উবুন্টু বাংলাদেশ” এর মেইলিং লিস্টে কিছু মানুষের ভুল ধারনা কে ভেঙ্গে দিতে কিছু কঠিন মন্তব্য না করতাম আর সেখানে আমাদের গৌতম দা আমাকে এই বিষয়ে বিশদভাবে লেখার জন্য উৎসাহ না দিতেন। গৌতম রয় কে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার ভেতরের আমি কে টেনে-হেঁচড়ে বের করে নিয়ে আসবার জন্য।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ লেখাটি আমি পর্ব আকারে বিগত ২৯শে ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী প্রতিটি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে প্রকাশ করছি এবং করবো ইনশাল্লাহ। তবে বিগত বৃহস্পতিবারে (২৬শে জানুয়ারী) পঞ্চম পর্বটি প্রকাশ করতে পারিনি। কেননা আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং অতিরিক্তমাত্রার যন্ত্রনাভোগ করেছি এই কটা দিন। তাই আমি আপনাদের সবার কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আজ একটু সুস্থবোধ করছি আর তাই প্রকাশ করলাম লেখার পঞ্চম পর্ব। অষ্টম পর্বে লেখার উপসংহার প্রকাশ করার ইচ্ছে রয়েছে। আপনার আগ্রহ থাকলে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পর্বের লেখাগুলো একটু সময় করে পড়ে নিতে পারেন।

আজকের লেখায় আমি, মাইক্রোসফট কর্তৃক ৫। আদর্শমানসমূহের অপব্যবহার (Abusing Standards) বিষয়ে যথা সম্ভব সহজ ভাষায় কিছু কথা বলতে চেষ্টা করেছি। আশা রাখি আজকে কিছু বিষয় চিরস্থায়ী রূপে আপনাদের মনে গেঁথে দিতে সক্ষম হবো।

“আদর্শমান” কি? আমি জানি আমার আজকের এই লেখারটুকুর বিষয়বস্তু দেখেই অনেকেরই মনে এই প্রশ্নটা জেগে উঠেছে। মাইক্রোসফটকে সবাই প্রযুক্তির জগতে একটা মহীরূহ ধরে নেন এবং তাই একান্ত মনেই হয়তোবা এটাও কল্পনা করে থাকেন যে মাইক্রোসফটই হলো আসলে নতুন নতুন সব প্রযুক্তির পথপ্রদর্শক, সৃষ্টির সূতিকাগার। কিন্তু আসলে বিষয়টা ঠিক উল্টো। “মাইক্রোসফট” এর পন্যগুলোর চেহারা থেকে শুরু করে সুবিধা/বৈশিষ্ট্য আর বিপননের ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখতে পাবেন যে আসলে মাইক্রোসফট সব সময়েই কোন একটি প্রতিষ্ঠানের পন্যকে নকল করেছে কিংবা প্রযুক্তি ধার করে এনে খুবই লোভনীয় মূল্যে আর স্বল্পতম সময়ে বাজারজাতের খেলায় মেতেছে। আর এই স্বল্প সময়ে যেহেতু সে প্রযুক্তিটা সে বাজারে ছাড়ছে এবং যেহেতু প্রযুক্তিটা তাঁর তৈরীকৃত নয় তাই এই প্রযুক্তির ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো তাঁর সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার পন্যগুলোতে রয়েই গেছে, সেই শুরু থেকে আজ অবদি।

আমরা তো সবাই নিশ্চয়ই জানি যে, খাদ্যবস্তুর মানদন্ডের বিচারে “দুধ (Milk)” কে বলা হয় আদর্শ খাবার। কেননা একজন পূর্ন বয়স্ক মানুষের দৈহিক পুষ্টিচাহিদার প্রায় সবটুকুই এই দুধে পাওয়া সম্ভব। তাই যখন দুধকে আদর্শ খাবার বলা হয় তাহলে —

১. নিশ্চয়ই গরু কিংবা ছাগল কিংবা ভেড়া কিংবা উট কিংবা এই রকম দুগ্ধদানকারী প্রানীগুলোকেই আদর্শখাবারের ভান্ডার হিসেবে ধরে নেয়া যায়?

২. যদি মানব শিশু কিংবা অন্য কোন প্রানীর বাচ্চার বিষয়ে দুধ কে খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয় তো সেক্ষেত্রে নিশ্চয়ই ঐ শিশু কিংবা প্রানীর বাচ্চাটার মায়ের বুকের দুধকেই বেশী প্রাধান্য দেয়া হবে?

৩. যদি মায়ের বুকের দুধই বাচ্চার জন্য প্রধান এবং আদর্শ খাদ্য হয় একটা নির্দিষ্ট সময় অবদি আর যদি কোন কারনে সেটার অভাব ঘটে তাহলে কি বাচ্চাটার শারীরিক আর মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না?

৪. যদি এমনটাই হয় যে মা এই সদ্যজাত বাচ্চাটাকে নিজের অসুস্থতার কারনে অন্য কোন বাইরের খাবার কিংবা অন্য কোন প্রানীর দুধ খাওয়ালেন, তাহলে কি ঐ বাচ্চা তাঁর জন্য নির্ধারিত পুষ্টিটুকু পেয়ে যাবে?

৫. গোয়ালা বা দুধওয়ালা যদি আপনাকে খাঁটি দুধ না দিয়ে ভেজাল দুধ দেয় তো সেক্ষেত্রে বাচ্চাটার উপকারের স্থলে কি বিরাট ক্ষতি হবার সম্ভবনা থাকে না?

৬. আর যদি সেই পুষ্টিটুকু পূরন করা না যায় কিংবা মা যদি বাইরের কোন খাবার কিনতে অক্ষম হন আর বাচ্চাকে নিজের সেই অসুস্থ শরীরের দুধই বাচ্চাটাকে দিতে থাকেন তো বাচ্চাটার জন্য সেটা কি উপকারী না অপকারী?

এবারে যদি সেই “মা” এর স্থলে “সাধারন কম্পিউটার ব্যবহারকারী বা আপনার নিজেকে”, “বাচ্চা”র স্থলে “আপনার প্রিয় ডেস্কটপ/ল্যাপটপ/নেটবুক/ট্যাবলেট”কে, “গোয়ালা/দুধওয়ালা” হিসেবে “মাইক্রোসফট” কে, আর “দুধ” হিসেবে “সফটওয়্যার”কে বিবেচনা করা হয় তো আপনি নিজেই পরিস্থিতিগুলো বিবেচনা করে দেখুন তো “দুধের” ভেজাল বা ত্রুটির ঘটনার ফলাফল অবশেষে কি দাঁড়াচ্ছে? আর পরিস্থিতি সামাল দিতে তাহলে বর্তমানে আপনার করনীয় কি? আশা রাখি এই সমস্যাগুলোর সবচাইতে কার্যকরী ও সহজতর সমাধান এই লেখার বাকি অংশ পড়তে পড়তেই পেয়ে যাবেন। 🙂

প্রযুক্তির দুনিয়ায় “আদর্শমান” সমূহ কি? খুব সহজ-সরল ভাষায় বললে — প্রযুক্তির বিষয়গুলোকে ব্যাখ্যা করা এবং যান্ত্রিকরূপে একে সামগ্রিকভাবে সব প্রতিষ্ঠানকর্তৃক একইভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে সকল প্রযুক্তিপন্য ব্যবহারকারীদেরকেই একে অপরের সাথে তথ্যের আদান-প্রদান এবং ব্যবহার সহজীকরণের জন্য যে নীতিমালা করা হয় সেটাই “প্রযুক্তির দুনিয়ায় আদর্শমান”রূপে চিহ্নিত হয়ে থাকে।

তার মানে হলো এই আদর্শমান সকল প্রযুক্তিপন্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের জন্য সমান ব্যবসাক্ষেত্র সৃষ্টি করে থাকে। এবং সকল প্রযুক্তিব্যবহারকারীদেরকে বেছে নেবার সুযোগ সৃষ্টি করে যেনো তাঁরা নিজের পছন্দমতো নিজের পছন্দের সফটওয়্যার/হার্ডওয়্যারটি কিনতে/ব্যবহার করতে পারেন। একই সাথে এই আদর্শমান নিশ্চিত করে থাকে তথ্যের সুরক্ষা এবং আগামীদিনের প্রযুক্তির সাথে তথ্যের সামঞ্জস্যতাকে। যেনো আগামীতে ঐ ব্যবহারকারী একই প্রতিষ্ঠানের হার্ডওয়্যার কিংবা সফটওয়্যার ব্যবহার না করেও নিজের প্রয়োজনীয় তথ্যটুকু পূর্নব্যবহার করতে সফল হন।

প্রযুক্তির দুনিয়ায় “আদর্শমান” সমূহের অপব্যবহার কি? যদি উপরোক্ত নীতিমালা বা আদর্শমান লংঘন করে কোন প্রতিষ্ঠান কোন পন্য তৈরী এবং বাজারজাত করে এবং সেটা ব্যবহারকারীদেরকে বাধ্যগত করে নতুন আসা প্রযুক্তিতে সমন্বয় কিংবা নতুন করে ব্যবহারে তো সেটাকেই সহজ ভাষায় আমরা বলবো — প্রযুক্তির দুনিয়ায় “আদর্শমান সমূহের অপব্যবহার”। আমার লেখার পরবর্তী অংশটুকু পড়বার আগে, নিজেকে অধিকতর তথ্যসমৃদ্ধ করে নিতে চাইলে পড়তে পারেন — http://www.gnu.org/philosophy/categories.html#ProprietarySoftware

“আদর্শমান” সমূহের অপব্যবহারের শীর্ষতালিকায় মাইক্রোসফটের নামটা সর্বোচ্চ অবস্থানে কেন? এটা জানতে চাইলে আসুন দেখি মাইক্রোসফট নিজের তৈরী পন্যের মাধ্যমে সে এ অবদি কি কি অ-কাজ/কু-কাজ/কুপ্রচেষ্টায় লিপ্ত ছিলো এবং রয়েছে। আপনারা তো নিশ্চয়ই বর্তমান সময়ের ইন্টারনেটের দুনিয়া সম্পর্কে বেশ ভালোরকম অবগত আছেন। আচ্ছা বলুন তো দেখি বর্তমানে ইন্টারনেটের জগতে সবচাইতে জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার কি? আমি জানি যে, এ পশ্নের উত্তরে কেউ বলবেন গুগল ক্রোম আবার কেউ বা বলবেন ফায়ারফক্সের নাম। মজার বিষয় হচ্ছে ঠিক এই রকমই দুটো ব্রাউজার হলো সাফারী আর ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার। সাফারী আর গুগল ক্রোম এর এর জাতটা মোটামুটি একই রকম। এবং কার্যপ্রনালীও প্রায় একই ধরনের। তবে গুগল ক্রোম আর ফায়ারফক্স এ দুটো ব্রাউজারই কোন সফটওয়্যার বিক্রেতা বিক্রয় করার মতো ক্ষমতা রাখে না। সাফারী বিক্রয় করে থাকে অ্যাপল আর ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার বিপনন করে থাকে মাইক্রোসফট। তবে প্রাথমিক জনপ্রিয়তার পার্থক্যের জায়গাটুকু এই বিনামূল্যের কারনে নয়। মূল কারনটাই হলো সেই “আদর্শমান”, আর সেই মতে কোন ওয়েব ব্রাউজার কোন ক্রমেই মূল ওএসএর ফাইলসিস্টেমকে পড়ার কিংবা ওএস এর সাথে এমবেডেড হতে পারবে না। কেননা এতে করে কম্পিউটারে রক্ষিত গুরুত্বপূর্ন তথ্যের ক্ষতি সাধন হবার সম্ভবনা অনেক বেশী। অত্যন্ত গুরুত্বের বিষয় হলো একমাত্র ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারটাই এই দোষে দুষ্ট এবং ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার মূল ওএস এর সাথে এমবেডেড। কি রকম? সেটা তো আমার লেখার তৃতীয় পর্বে বলেইছিলাম। তবু আজকে আপনার চাক্ষুষ প্রমাণের জন্য আরেকটু বলি। আপনি যদি “খিড়কী” কিংবা “জানালা” ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তো আপনি আপনার পিসির মাইকম্পিউটার আইকনে ক্লিক করুন। যে উইন্ডো পেলেন তাতে অ্যাড্রেসবারে যে কোন ড্রাইভ লেটার লিখে কোলন চিহ্ন [:] দিয়ে এন্টার চাপুন। দেখবেন আপনার পিসির ঐ ড্রাইভটা ফাইল ব্রাউজারে প্রদর্শিত হয়ে গেছে। এবারে ঐ ঠিকানারবক্সটাতেই একটা ওয়েব ঠিকানা লিখুন। যেমন — http://www.google.com এবং এন্টার চাপুন। দেখবেন আপনার ফাইল ব্রাউজারটাই সংগে সংগে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারে পরিনত হয়ে গেলো এবং ঐ ওয়েব ঠিকানায় আপনাকে নিয়ে গেলো। ঠিক এই ক্রটিটুকুই মাইক্রোসফট তাঁর প্রতিটা “খিড়কী” সংস্করনের সাথে বজায় রেখে চলেছে এবং এ নিয়ে যতই আদর্শমানের অপব্যবহার হোক না কেন তা পাশ কাটাতে সে নানান ছলনার আশ্রয় অতীতে নিয়েছে, বর্তমানে নিচ্ছে এবং আগামীতেও নিতে সচেষ্ট থাকবে। আপনারা যাঁরা “সপ্তম জানালা” বা উইন্ডোজ সেভেন ব্যবহার করে থাকেন তাঁরা নিশ্চয়ই কখনো নিজ কম্পিউটারে ওএসটা ইন্সটল করার সময়ে কোন ব্রাউজার ব্যবহার করতে চান তা জানতে বা জানাতে চাইতে পারেন না? তবে এটা জেনে রাখুন যে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ভুক্ত দেশগুলোতে মাইক্রোসফটকে এই একচেটিয়া ত্রুটিপূর্ন আচরন বারবার করতে দেয়া থেকে বর্তমানে রহিত করা হয়েছে এবং সেখানে এই “সপ্তম জানালা” পিসিতে ইন্সটল করার সময়েই মাইক্রোসফট কম্পিউটার ব্যবহারকারীর পছন্দানুযায়ী ওয়েব ব্রাউজার পছন্দ করে নেবার বার্তা দেখাতে বাধ্য। অন্যথায় ঐ বাজারে তাঁর পন্য চিরতরে নিষিদ্ধ হয়ে যাবে এবং বর্তমান পন্যগুলোর জন্য তাঁকে জরিমানা গুনতে হবে। ওয়েব ব্রাউজার নিয়ে মাইক্রোসফটের অনৈতিকতার কিছু আপডেট পাবেন এখানে — http://www.opera.com/press/releases/2007/12/13/

আসুন ওএস এর দুনিয়া ছেড়ে মাইক্রোসফটের অফিস প্যাকেজের পন্যের ঘোটলাগুলো একটু ঘাঁটিয়ে নিই। ওপেন অফিস এবং লিব্রে অফিস হলো মুক্ত অফিস প্যাকেজের প্রকৃষ্ট উদাহরন। যা বর্তমানের প্রায় সব প্রজাতির অপারেটিং সিস্টেমে চলতে সক্ষম। এই অফিস প্যাকেজগুলো নিজের নথিগুলোর তথ্যগুলো এক্সএমএল (XML) ফরম্যাটে সংরক্ষন করে থাকে এবং একটা ভার্সনে কিংবা একটা প্যাকেজে তৈরী করা নথি অপরটিতে অতি সহজেই পড়া যায় এবং সম্পাদনা করে প্রয়োজনটুকু মিটিয়ে নেয়া যায়। মাইক্রোসফটের অফিস সফটওয়্যারের ভেতরেও নথিগুলোর তথ্য সংরক্ষন এক্সএমএল ফরম্যাটেই করা হয় তবে সেটা “আদর্শমান” কে পাশ কাটিয়ে, মাইক্রোসফটের নিজস্ব পন্থায়। ফলে মাইক্রোসফটের অফিস ডকুমেন্টের মাইক্রোসফটেরই অন্য একটা অফিস প্যাকেজের সংস্করনের সাথে কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে, অনেক ক্ষেত্রে নথিটি সম্পূর্নই পুরাতন এমএস অফিসে অকার্যকর হয়ে যায়। মাইক্রোসফট নিজের অফিস প্যাকেজে যে এক্সএমএল ফরম্যাটটা ব্যবহার করে তা উন্মুক্ত এবং অন্যদের জন্য ব্যবহার উপযোগী রাখাটা উন্নত দেশগুলোর সফটওয়্যার নীতিমালা অনুযায়ী বাধ্যতামূলক। তবে এই বিষয়টাকে সে টেকনিক্যালি বেশ চমৎকারভাবে পাশ কাটাতে নিজের তৈরী এই “অনাদর্শিক” অফিস এক্সএমএল (OOXML) ফরম্যাটে ব্যবহারের জন্য যে সহায়িকা দিয়েছে তা প্রায় ৬০০০ (ছয় হাজার) পৃষ্ঠার, যা মাইক্রোসফট ব্যতীত অন্যদের জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহারকে জটিলতম করে তুলেছে। তদুপরি ওপেন ডকুমেন্টের আদর্শমানে তৈরী করা নথিপত্রগুলো এমএস অফিসে পড়া ও সম্পাদনার ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে জটিলতা সৃষ্টি করে থাকে মাইক্রোসফট। ফলে এখানেও মাইক্রোসফট নিজের ব্যবহারকারীদেরকে নিজের নতুন পন্যগুলোর দিকে প্ররোচিত এবং অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে থাকে, একই সাথে নিজের পন্য ব্যতীত সাধারন ব্যবহারকারীর জন্য পছন্দের বিষয়টাকে সম্পূর্নই অবহেলা করে থাকে। ওপেন ডকুমেন্ট এর “আদর্শমান” কে প্রভাবিত করতে মাইক্রোসফট বিভিন্ন কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে, এমনকি প্রযুক্তির জগতের “আদর্শমান” নির্ধারন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদেরকে ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে প্রভাবিত করতে ও চেষ্টা করেছে। এ বিষয়ে আরো অধিকতর জ্ঞানার্জনের জন্য পড়ে নিতে পারেন — http://www.marketwatch.com/story/story/print?guid=C0D943C4-4ADC-471C-8F87-9181A4EC3E7B

দুষ্ট গরু নাকি শুন্য গোয়াল ? !!! সাধারন কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মতদ্বৈততার ঠিক এই অবস্থানটুকুর কারনেই মাইক্রোসফট নিজে কোন নতুন প্রযুক্তিতে গবেষণার পেছনে ব্যয় করে খুব কম। তার চাইতে ঐ অর্থের ব্যবহার করে যদি অন্য কারো প্রযুক্তির কার্বন কপি তৈরী করিয়ে/জবর-দখল করে এনে/কোনমতে একটা কিছু তৈরী করে সাধারন ব্যবহারকারীদেরকে চটকদার আর মনোলোভা বিজ্ঞাপনের ভেলকি দেখিয়ে বোকা বানানো যায় তো তাতে অতি অল্প সময়েই নিজের ভাঁড়ারে পয়সা আসবে ভালোই। ঠিক এমনি কিছু কাজা করে যাচ্ছে ইদানিংকার চাইনিজ মুঠোফোন প্রস্তুতকারকগণ। এতো সস্তায় এখন বাজারে মুঠোফোন সেট পাওয়া যাবে যে তা মনে হয় “মুড়ি খাইলে ঠোঙ্গা ফ্রী” এর মতো একটা ব্যাপার। তবে মাইক্রোসফট কিন্তু নিজের বিপননের হিসেবে বেশ কড়া এবং পন্য যাই হোক না কেন তাঁর ক্রেতা সৃষ্টি করতে সে কিন্তু শুধুই বিপনন ব্যবস্থার ওপরে ভরসা করে না। বরংচ তাঁর কিছু পোষা প্রানী, যাঁরা আমাদের মানব সমাজের বেশ উঁচু স্তরে আসীন এবং এঁদেরকে বেশ মনভোলানো খেতাব (এমএসপি, এমসিপি ইত্যাদি) দিয়ে, বিভিন্ন আয়োজনে পুরষ্কার ও নানান রকম উপহারের মাধ্যমে এমনকি নিজের কিছু যাচ্ছেতাই মানের পন্যের বিনামূল্যের স্বত্তঃপ্রদানের মাধ্যমে (ফ্রী অব কস্ট লাইসেন্সিং) নিজের পন্যের বিপননের পক্ষে কাজ করাতে ব্যবহার করে থাকে। আর এঁরাই কিছু বুঝুক চাই না বুঝুক, যে কোন প্রযুক্তি পন্যের বিষয়ে মাইক্রোসফটের পক্ষে দালালীটুকু ঠিকঠাক করে দিতে আত্মপ।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী যেভাবে একসময় আমাদেরকে এই ভারতীয় উপমহাদেশে এসে উন্নত জীবন, শিক্ষা, প্রগতি ইত্যাদির মনভোলানো কথায় সমাজের কিছু মানুষকে কব্জা করার মাধ্যমে জনসাধারনকে বাধ্য করেছিলো গোলামী করতে ঠিক একই পন্থা বেছে নিয়ে মাইক্রোসফট ও। তবে পার্থক্য এটুকুই যে ঐ সময়ের ভুলগুলো শুধরে নিতে আমাদের প্রায় দুইশত বছর আর প্রায় কোটিপ্রানের বিসর্জন দিতে হয়েছিলো আর বর্তমান সময়ে আমাদের শিক্ষিত সচেতন তরুন প্রযুক্তিবিদদের মাধ্যমে যে ভুল আমরা করেছি, করছি এবং করতে যাচ্ছি কোন ভালো-মন্দ যাচাই-বাছাই না করে, অন্ধের মতো পথ চলতে গিয়ে আর প্রকারান্তরে পড়ছি এই বেনিয়া প্রতিষ্ঠানের খপ্পরে তার সংশোধনী আমার পরবর্তী কতো প্রজন্ম পরে হবে তা সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন।

আমার বক্তব্য পরিষ্কার — হয় মাইক্রোসফট নিজের এই অনৈতিক আচরনগুলো থেকে সরে আসবে এবং ব্যবহারকারীদেরকে নিজের পছন্দানুযায়ী কাজকর্ম করার সুযোগটুকু করে দেবে অথবা আমি নিজেই নিজের কম্পিউটারে কাজের জন্য নিজের পছন্দের সফটওয়্যার সৃষ্টি করতে চেষ্টা চালাবো। আর এই চেষ্টার শুরু আজ আমিই করতে যাচ্ছি এমনটা নয়। আমার মতো এই রকম মুক্ত আর স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য প্রাথমিক কাজটুকু সহ একটা যৌক্তিক আর সুগঠিত অবস্থান তৈরী করে দিয়েছেন রিচার্ড স্টলম্যান (http://www.stallman.org), তাঁর Free Software Foundation বা মুক্ত সফটওয়্যার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে। সাথে ১৯৯১ সালে এই আন্দোলনে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে খুব কম সময়েই নতুন এই আলোকময় পথের কান্ডারীর ভূমিকায় অবতীর্ন হন লিনুস বেনেডিক্ট টরভ্যাল্ডস (http://en.wikipedia.org/wiki/Linus_Torvalds), যাঁকে আমরা সবাই জানি/চিনি “লিনুস” নামে এবং “লিনাক্স (Linux)” কার্নেলের জনক হিসেবে।

নিজেকে আরো সচেতন করে তুলতে, প্রযুক্তির বিষয়গুলোতে আপনার অবস্থান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে এবং শুধুমাত্র অর্থের লিপ্সাকে চরিতার্থ না করেও কিভাবে জনসেবার মাধ্যমে জীবনধারন আর ব্যবসায়িক কুটিল মনোভাবের বদলে মহৎভাবের বিকাশে মানবতার উন্নতি সাধন করা সম্ভব সে নিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে ঘুরে আসতে পারেন — http://www.fsf.org থেকে।

আমার নিজের জ্ঞান খুবই সীমিত তবে তাতে নিজের ভালো-মন্দ বিচারের যে ক্ষমতাটুকু মহান আল্লাহ তা’য়ালা আমায় দিয়েছেন সেটুকুর ব্যবহার আর নিজ দ্বায়িত্ববোধেই আমাদের আগামী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে কিছু সতর্কতা, কিছু সচেতনতা সৃষ্টির জন্যেই আমার এই লেখা। কবে, কখন, কার কতটুকু উপকার হবে তা জানি না। তবে আগামী প্রজন্মের জন্য আমার ছোট্ট এই প্রয়াস, যেনো সঠিক পথের শুরুর দিকের একটা আলোক নির্দেশিকা হয় সেই চেষ্টা চালাতে থাকবো।

বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ৬) প্রকাশিত হবে আগামী ২রা ফেব্রুয়ারী ২০১২ইং, বৃহস্পতিবার রাত্রে।

বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ১) প্রকাশিত হয়েছিলো বিগত ২৯শে ডিসেম্বর ২০১১ইং, বৃহস্পতিবার রাত্রে।
বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ২) প্রকাশিত হয়েছিলো বিগত ৫ই জানুয়ারী ২০১২ইং, বৃহস্পতিবার রাত্রে।
বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ৩) প্রকাশিত হয়েছিলো বিগত ১২ই জানুয়ারী ২০১২ইং, বৃহস্পতিবার রাত্রে।
বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ৪) প্রকাশিত হয়েছিলো বিগত ১৯শে জানুয়ারী ২০১২ইং, বৃহস্পতিবার রাত্রে।