Posted in কিভাবে কিভাবে যেন লিখে ফেললাম, দেশ ও জাতির প্রতি দ্বায়বদ্ধতা, ভালো লাগা, ভালোবাসা

মূর্ছনায় মূর্ছিত জীবন


লেখালেখির বিশেষ সুযোগ মিলছিলোনা গত প্রায় দুটো বছর। গত বছরের শেষ দিক থেকে শরীরের অবস্থাও বেশ একটা সুবিধার না। সব মিলিয়ে লিখি-লিখবো-লিখছি করে মনের অনেক ভাব জমতে জমতে প্রায় হিমালয়সম। গত প্রায় দুই দিন সুযোগ পেলাম মনের মতো করে নিজের জ্ঞান সংগ্রহের দুয়ারগুলো খুলে বসার। লিখতে মনে চাইলো হুট করেই তাই ঘুম ঢুলু ঢুলু চোখেই যেটুকু লিখতে পারলাম লিখলাম। আগামীতে আবার কখন সুযোগ মিলবে কে জানে! 🙂 লেখার শুরুতে কোন নাম দেবো বলে ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু প্রকাশ করার সময় একটা শব্দ ঘনঘন মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকলো। মগজের অলিগলিতে শব্দের ঘুরপাকটাকে থামিয়ে দিতে বাধ্যগতভাবে এই লেখায় এইরকম একটা বিশালবপু মার্কা শিরোনাম দেয়া। পাঠকের কাছে অগ্রীম ক্ষমাপ্রার্থী

মানুষের জীবনে নানান রকমের অভিজ্ঞতা হয়। সব অভিজ্ঞতা সব সময় ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কাজের অভিজ্ঞতা, গল্পের বই পড়ার অভিজ্ঞতা, আড্ডায় পাওয়া অভিজ্ঞতা, নাচের অভিজ্ঞতা, নাচতে গিয়ে আছড়ে পড়ার অভিজ্ঞতা এ সব অভিজ্ঞতাই মূলত জ্ঞান আর জ্ঞানের বিকাশকে মানব মস্তিষ্কে স্থায়ী করে রাখে। এবং সময়ে-অসময়ে এসব অভিজ্ঞতা থেকেই মানুষ জীবনের নানান সিদ্ধান্ত নিতে থাকে, আমরণ।

সকাল বেলা ঘুম ভাঙবার কথা ছিলো সকাল আটটায়, আমার ঘুম ভাঙলো প্রায় পৌনে দশটায়। ততক্ষণে আম্মা বেশ কয়েকবার ডেকে গিয়েছেন। বেশিক্ষণ ঘুমিয়ে রক্তের চিনির দোষ আরো বাড়িয়ে তুলছি বলে সতর্কতা জানিয়ে দিয়েছেন। তবু সকালের ঘুমটা বেশ ভালো লাগছিলো। চোখ মুদে পড়ে ছিলাম ঘুম ঘুম ঘোর নিয়েই। ঘুম থেকে পুরোপুরি সজাগ হতেই মাথার ভেতরে বেশ কিছু কাজের তালিকা মুঠোফোনে আসা একটানা ক্ষুদের বার্তার মতো এসে জট পাকিয়ে দিলো। শরীরটাকে পুরোপুরি সজাগ করে উপুড় হতেই মাথার সামনে চালু থাকা ল্যাপটপের পর্দায় ফায়ারফক্স ব্রাউজােরর নোটিফিকেশনে পঁয়ষট্টি সংখ্যাটা দেশেই বেশ বিরক্ত হলাম।

সারা সপ্তাহে এমনিতেই দৈনিক দেড়শোর মতো ইমেইলের উত্তর দিই। তারপরেও ক্রমাগত এই চাপ বেড়ে চলেছে দিনকে দিন। খেয়াল হচ্ছে যে রাত্রি দুইটার সময়ে ঘুমাতে যাবার কালেও ইনবক্সে কাউন্টার শূন্যতে নামিয়ে এনেছিলাম। রাত না পোহাতেই আরো ষাট+ বার্তা বিরক্তির কারন হয়ে উঠলো। যদিও জানি যে একবার ইনবক্সে ঢোকামাত্রই এই বিরক্তিই রূপ নেবে ভালোলাগায়। হুট করেই মগজের কোন একটা কোণে কিছু আলোড়ন ঘটে গেলো। মনে পড়ে গেলো প্রায় আট বছর আগের কথা। কোন এক শীতের শেষ বেলায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে চলা কম্পিউটিং দেখে ডাক্তার বলে উঠেছিলেন —
-জীবনটাকে আরো একটু বেশি সময় নিয়ে উপভোগ করতে চাও?
–সে তো সবাই চায়। আমার তো সবে ছাব্বিশ।
-সেজন্যেই তো বলা। জীবনে আরো কিছু দিন যোগ করতে হলে ঐ কোলের উপরে থাকা যন্ত্রটা থেকে দূরে সরে আসো।
–কিন্তু ডাক্তারবাবু এটাই তো আমার জানা একমাত্র কাজ, আমার ভালোলাগা, ভালোবাসা।
-যন্ত্রকে ছেড়ে বাস্তবে আসো। নিজের মতো করে কাউকে গুছিয়ে নাও। রক্ত-মাংসের ভালোবাসা অবশ্যই যান্ত্রিক ভালোবাসার চাইতে মূল্যবান ও উপভোগ্য।

তবে ডাক্তার বাবুর সেই নিষেধাজ্ঞা আজো অবদি আমার মানা হয়নি। বোঝা হয়নি রক্ত-মাংসের ভালোবাসার স্বাদ। যন্ত্র আর যন্ত্রের ভালোবাসাতেই আটকে আছি আজো। হয়তোবা শেষতক এইই থাকতে হবে।

মাথার মধ্যে এসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতেই মাউস দিয়ে চট করে একটা ক্লিক করে দিলাম ইনবক্স মেইল কাউন্টারটাতে। টেলিটকের বিশেষ সাশ্রয়ী থ্রিজি প্যাক ব্যবহার করি তাও আবার ঢাকার অদূরেই এক আমাজনে বসে তাতে আবার এলাকার গোটা দশেক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারকারীর মধ্যে একজন বিধায় নেটের গতি সেইরকম। ক্লিক করার পাঁচ সেকেন্ডের মাথায় চোখের সামনে পসরা সাজিয়ে বসে পড়লো জিমেইলের ইনবক্স আর কুড়ি সেকেন্ড পার না হতেই টপাটপ প্রথম পৃষ্ঠার কুড়িটা মেইলের বিষয়বস্তু পড়া হয়ে গেলো।

প্রথম তিনটা মেইলই ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন নিয়ে এসেছে। পরের দুটো অবশ্য ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো কিছু স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের কিছু আয়োজন, কিছু সদস্যদের ব্যক্তিগত বার্তা নিয়ে। বাদবাকী সব বিভিন্ন কাজের বিষয়ে, প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগের গোটা ছয়েক মেইল। এই তো! ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় যেনো যেকোন সময়ে শিক্ষক হিসেবে কাছাকাছি থাকতে পারি তাই সেমিষ্টারের শুরুর ক্লাশেই ওঁদের সবার কাছে আমার ইমেইল আর মুঠোফোন নম্বরটা জানিয়ে দিই। যুক্ত করে নিই গ্রুপ মেইলে। আর তাই প্রথমেই শুরু করলাম ওঁদের সেই প্রশ্নভরা মেইল গুলো পড়া আর জবাব দেয়া। এগারোটা অবদি গেলো একের পর এক মেইলৈর জবাব লিখে লিখে। ইনবক্স মেইলগুলো প্রথম পাতা পেরিয়ে দ্বিতীয় পাতায় আসতেই চোখে ছানাবড়া দেখা শুরু হলো। অনেকগুলো বার্তা এসেছে যেগুলো কোন না কোনকালে আমি অনলাইনে কোন কিছু কেনাকাটার সাইটে দিয়ে ছিলাম। আবার কোনটা হয়তোবা

——————–(চলবে)

লেখক:

রান্না করা, কম্প্যুটিং, ক্রিকেট

1 thoughts on “মূর্ছনায় মূর্ছিত জীবন

  1. প্রিয় রিং ভাই!
    আশা করি সকল বাঁধা উপেক্ষা করে আপনি আমাদের মত নগন্য মানুষদের জ্ঞানের দ্বার খুলে দিতে লিখে যাবেন।

লেখাটি পড়ে কেমন লাগলো মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.