Posted in খেয়াল করুন, জেনে রাখুন, দেশ ও জাতির প্রতি দ্বায়বদ্ধতা, প্রযুক্তি নিয়ে আউলা চিন্তা, ভালো লাগা, ভালোবাসা

“বারক্যাম্প”??? !!! বিষয়ডা কি? খায়? মাথায় দেয়? নাকি…


‘ক্যাম্প’ শব্দটা শোনামাত্রই মিনিমাম কান্ডজ্ঞান সম্পন্ন আর সচেতন আম্রজনতার মগজের সিন্যাপসে ক্রমাগত রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার ফলে যে চিত্রখানি ফুটিয়া উঠিবে তাহা হইলো — “একখানি মুক্ত এলাকায় কতকগুলি তাম্বু খাটাইয়া, কতকগুলি মানবছানার, একটানা কয়েকটি দিবা ও রাত্রি অতিবাহিত করন।” তবে আমাদের আজিকার আলোচ্য বিষয়ের শেষে ক্যাম্প থাকিলেও তাহার পূর্বে একখানি অতিরিক্ত শব্দ “বার” যুক্ত হইয়াছে। ইহার প্রতিক্রিয়া হইতে পারে কয়েকরকম। প্রথমত: “ইহা কি এমন একখানি ক্যাম্প যেখানে বার থাকিবে?” মানে হইতেছে যে, “এখানে কি জনগন পর্যাপ্ত পরিমানে অ্যালকোহল যুক্ত পানীয় সেবনের অধিকার পাইবে?” এবং দ্বিতীয়ত: “নাকি ইহা এমন ক্যাম্প যেখানে সারি সারি “বার” আইমিন দন্ড দন্ডায়মান থাকিবে? আর যদি দন্ডের দন্ডায়মান অবস্থাই মুখ্য হয় তো, ক্যাম্পের উদ্দেশ্যখানি কি? কোন বার কখন হেলিয়া, কাইত হইয়া কিংবা শুইয়া পড়িতেছে তাহার অবলোকন কিংবা দৃশ্যধারন করা?” তৃতীয়ত: “নাকি ইহা ১২ জন মানুষের ক্যাম্প?”

যাই হোক অত দুশ্চিন্তা, প্রশ্ন, পাল্টা প্রশ্ন, ব্যাখ্যা, যুক্তি/তর্কে মাথা চুল তুলে ফেলে টাক সৃষ্টি কিংবা সদ্য গজানো টাকখানি চকচকে করে তোলবার সাধ আমার নাই। সোজা মূল বিষয়ে চলে আসি। “বারক্যাম্প” হলো এমন একটা মিলনমেলা যেখানে কিছু সচেতন মানুষ একত্রিত হবেন এবং পূর্বনির্ধারিত কিছু বিষয়ে সরাসরি আলোচনা ও নিজ নিজ মতামত সবাই সবার সাথে ভাগাভাগি করবেন। প্রয়োজনে কিছু লাইভ ডেমো কিংবা তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করবেন এবং এই আয়োজনটা হবে একটানা কমপক্ষে ৪৮ ঘন্টাব্যাপী। ফলাস্বরুপ পূর্বনির্ধারিত বিষয়/বিষয় সমূহে কার্যকরী কিছু পদক্ষেপ, সমাধান, দিক নির্দেশনা বেরিয়ে আসবে খুব সহজ ও সামগ্রিকপন্থায়, যা কিনা সমগ্র বিশ্বের জন্যেই হতে পারে দৃষ্টান্তস্বরুপ।

ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে আর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জ্ঞানভান্ডার আন্তর্জালের জগৎ থেকে কুড়িয়ে-কাড়িয়ে যতটুকু জ্ঞানার্জন করেছি, তাতে করে বলতে পারি যে “বারক্যাম্প” প্রথমবারের মতো পৃথিবীর বুকে আয়োজিত হয়েছিলো ক্যালিফোর্নিয়ার পাওলো অল্টো তে, ২০০৫ সালের আগষ্ট মাসের ১৯ থেকে ২১ তারিখ অবদি। আয়োজন স্থল ছিলো Socialtext এর অফিস কক্ষ। মাত্র ১ সপ্তাহের পরিকল্পনায় আয়োজিত এই আয়োজনে অংশ নেন প্রায় ২০০ শতাধিক মানুষ। ২০০৬ সালেই প্রথম বর্ষপূর্তিতে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয় “বারক্যাম্প আর্থ” শিরোনাম নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে, আগষ্ট মাসের ২৫-২৭ তারিখ ব্যাপী। ২০০৭ সালে এসে পুনরায় এই আয়োজন ফিরে আসে এর প্রথম আয়োজন স্থলে। কিন্তু এবার আর সেই ছোট্ট অফিস কক্ষে কুলায়নি। প্রায় তিনটা ব্লক ব্যাসের বৃত্তের আয়তন জুড়ে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে অংশ নেয় ৮০০ র অধিক আগ্রহী। আর আয়োজনটা চলে আগষ্ট মাসেরই ১৮-১৯ তারিখ জুড়ে। ২০১০ সালের জানুয়ারীতে মিয়ানমার(বার্মা) এ অনুষ্টিত “বারক্যাম্প ইয়াংগুন” ছিলো সাড়া জাগানো। প্রায় ২৭০০ (দুই হাজার সাত শত) আগ্রহী রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে নিশ্চিত করেন তাঁর অংশগ্রহন। আজ অবদি বিশ্বের প্রায় ৩৫০ টি শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই আয়োজন। সর্বোচ্চ আয়োজনটি ছিলো ২০১১ সালের জানুয়ারী মাসেই, এতে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ৪৭০০ (চার হাজার সাত শত) মানুষ এবং এ আয়োজনটিও মিয়ানমারে আয়োজিত হয়েছিলো।

“বারক্যাম্প’ কেন অনন্য?
# কেননা এই ক্যাম্পে অংশগ্রহনকারী প্রত্যেকেই পূর্বনির্ধারিত বিষয়সমূহ নিয়ে কথা বলতে/চিন্তা-চেতনা/ভাবনা/পরিকল্পনা ভাগাভাগি করতে আগ্রহী।
# তাঁরা একে অন্যের সাথে ব্যক্তিগত পরিচিতিতে বিশ্বাসী না হয়ে একত্রে অবস্থান ও কাজ করতে আগ্রহী।
# টানা ৪৮ ঘন্টা থেকে ৭২ ঘন্টা একটা নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে, কাজ করবার মতো যথেষ্ট ধৈর্য্য ও ক্ষমতা রাখেন অংশগ্রহনকারীরা।
# তথ্যের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে আয়োজন স্থলে অাবশ্যিক উপাদান হিসেবে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক উপলভ্য হয়ে থাকে।
# এই সম্মেলনে আজ অবদি সামগ্রিক সিদ্ধান্তগ্রহন অতি সহজেই হয়ে এসেছে এবং আগামীতেও সে ধারা বজায় থাকবে বলে আশা করা যায়।

আরো বিস্তারিত জানতে উইকিপিডিয়া’র এই আর্টিকেলটি দেখতে পারেন।

তথ্য ও প্রযুক্তিপ্রেমী কিছু বাংলাদেশী তরুন ও যুবার উদ্যোগে বাংলাদেশে এই আয়োজন প্রথমবারের মতো আগামী ১১ ও ১২ই ডিসেম্বর রবি ও সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ”বারক্যাম্প ২০১১, তথ্যপ্রযুক্তি’র বাংলাদেশ” শিরোনামে, পলাশীতে অবস্থিত ফ্রেপড (FREPD) মিলনায়তনে। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা অবদি দুইদিনব্যাপী আয়োজনে তথ্যপ্রযুক্তি’র বিভিন্ন বিষয় সহ আরো নানান বিষয়েই আলোচনা করা হবে।

আয়োজনটি উন্মুক্ত হলেও অংশগ্রহনকারীদের জন্য আইডি ও বিভিন্ন আয়োজন চুড়ান্ত করতে অগ্রীম নাম নিবন্ধন করা জরুরী। আর তাই আয়োজকদেরকে সহযোগীতা করতে অনুগ্রহ করে এখানে আপনার তথ্য দিন।

আয়োজনটি কোথায় হচ্ছে? কিভাবে পৌঁছুবেন আয়োজন স্থলে? দুশ্চিন্তা না করে প্রথমে ম্যাপ দেখে নিন। তারপরেও মাথায় গিট্টু ছুটলে আমার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করুন। 🙂