রাউন্ড – ২ >> [গোল্লাপ্রান্তর, ৩রা জুলাই, রাত্রি ১ ঘটিকা]
এইতো কিছুদিন আগেই হইয়াছে কি আমাদের হরিদাস পাল তাঁহার বন্ধুমহলে (মানে যে মহলে উনার বিশেষ গুনের কারনে বেশ সুনাম অর্জন করিয়াছেন) বেশ বলিতে লাগিলেন দিয়াছি আজ অমুককে তুমুল একখান, একেবারে গাঁইট সহ, একেবারে ইনটেক, টের পাইতেছে বাছাধন, আমি কি মাল, হুঁ, হাঁ, ডটডট .. ডটডট.. ডটডট।
তো ঐদিনকেরই অশুভ সাঁঝের বেলায় তাঁহার মহলেই তাহাকে ধুইয়া দেয়া হইলো (একেবারে ডিটারজেন্ট ব্লিচ)। পাড়াতুতো, খুড়তুতো, পিসতুতো, জেঠাতো ভাইয়েরা সহ পরিচিত-অপরিচিত-স্বল্পপরিচিত কিংবা নিজ বন্ধুমহলের কেহই বাদ দিলেন না। একেবারে যাচ্ছেতাইভাবে কচুকাটা করিলেন হরিদাস কে। কারনটা কি? জানিতে চান? তো বলিতেই হইতেছে। কারনটা হরিদাসের ‘ইচঁড়ে পাকামো’র অধিক কিছু নহে।
বয়স যাহাই হোক হরিদাস পাল তাহার মুরুব্বী জনকে মুরুব্বীর বদলে সবসময়েই ‘মোরব্বা’ বলিতে এবং জ্ঞান করিতে শিখিয়াছেন। যে কাহারো সাথে কোন ভাষার প্রয়োগে আর কতখানি মার্জিত ব্যবহারে এবং কি মাত্রা রাখিয়া কথা বলিতে কিংবা আচরন করিতে হয় উহা হরিদাসকে শিখাইবে এমন সাধ্য কাহার। তাহার চাইতেও গুরুত্বপূর্ন হইতেছে হরিদাসের ‘তালগাছ’ আঁকড়াইয়া ধরিবার আদি অভ্যাস। অবশ্যি যদিও অদ্যবধি একখানি ‘তালগাছ’ ও হরিদাস নিজের করায়ত্ত্ব কিংবা আঁকড়াইয়া রাখিতে সক্ষম হয় নাই।
তো হরিদাস নিজেকে, মাঝে মধ্যেই বিশেষ বিষয়ে বিশেষ পন্ডিত বলিয়া নিজ গন্ডি আর অঞ্চলে জাহির করিতে উদ্যত হয়। তো ঐদিনকেও একই অবস্থা হইয়াছে। হরিদাস নিজেকে তুমুল জ্ঞানী আর বিশেষজ্ঞ জ্ঞান করিয়া ভরা মজলিসে বিশেষ একখানি ঘোষনা দিয়া বসিলেন নিজ মহলে যে তাঁহাদের এক বিশেষ বন্ধুসভার বর্তমানে নেতৃত্বদানকারী বন্ধুখানি নাকি হুট করিয়াই ‘গাত্রোত্থান’ করিতেছেন। শুধু কি তাই এই মর্মে হরিদাস তাঁহার নিজ পরিচিত মহলে কিছু বার্তাও পাঠাইয়া দিলেন ‘প্রযুক্তির দূত’ (ইমেইল) মারফত। বার্তায় উনি ইহাও উল্লেখ করিতে ভুলিলেন না যে গাত্রোত্থানকারী বন্ধুখানি তাঁহার নিজ ইচ্ছায়ই গাত্রোত্থান করিবেন এবং এই মহা(অ)শুভ লগ্নে উনি ওই বন্ধুবরকে বিশেষ শুভেচ্ছাও অগ্রিম জানাইয়া রাখিলেন। কিন্তু কি আশ্চর্য্যের বিষয়!!! যে বন্ধুখানিকে উল্লেখ করিয়া উনি এই বার্তাগুলি পাঠাইলেন তিনি এ বিষয়ে পুরোটাই অজ্ঞ রহিলেন। পত্রপাঠ বন্ধুটির মাথায় রক্ত চড়িতে বাধ্য হইলো এবং পত্রাঘাত করিয়াই আশাহত বন্ধুবরটি, হরিদাসের এহেন কুটচাল আর ছন্নছাড়া কর্মের উল্লেখ করিয়া জবাব লিখিয়া ফেলিলেন।
হরিদাসের এহেন কর্মটি যে পুরোপুরি ছন্নছাড়া আর উদ্দেশ্যহীন ছিলো তাহাও নহে। উদ্দেশ্য ছিলো বন্ধুমহলে বন্ধুবরটিকে হেনস্থা করা এবং সম্ভব হইলে বন্ধুবরের বিরুদ্ধে বন্ধুমহলের সদস্যদের মন বিষাইয়া তোলা। কিন্তু ঘটনা ঘটিলো পুরোই বিপরীতে। বন্ধুবরটির সদাচারন আর সদব্যবহারের কারনে বন্ধুমহলে বিশেষ পরিচিত ছিলেন পূর্বে হইতেই। আর তাই বন্ধুমহল বন্ধুবরটিকে বিশদে সব জানাইয়া দিলো আর ঐ ঐতিহাসিক কুটপত্রের জবাবে হরিদাস নিজ কুটকাজের পরিকল্পনায় ইটের বদলে শুধু পাটকেল না পাইয়া, একেবারে কাঁদুনে বায়ুর আস্ত দুইখানা ‘শেল’ উপহার পাইলেন। ঘটিলো কি বন্ধুবর নিজের জবাব পত্রে হরিদাসের ‘গাত্রোত্থান’ প্রস্তাব কে শুধু অসংযত আর অপকৌশল বলিয়াই ক্ষান্ত দিলেন না, বরংচ বলিলেন হরিদাস ইহা করিয়াছে শুধু মাত্র নিজ চর্চা বন্ধু মহলে বাড়াইয়া তুলিতে। আর একই সাথে বন্ধুমহলের দ্বায়িত্বশীল একজন সভ্য হিসেবে নিজ গুনে আকৃষ্ট এক নবীন বন্ধুবরকে বন্ধুমহলে বরণ করিয়া লইলেন। বন্ধুমহল থেকে মানসিক অশান্তির চাইতে চাইলে নিজের নাম প্রত্যাহারের প্রস্তাবখানিও দিয়া দিলেন বন্ধুবরটি, আমাদের ‘উঁকুন বিশারদ’ হরিদাসকে।
হরিদাস অতঃপর আর কি করা, কুটচালে পরাজিত হইয়া, বন্ধুমহলের সর্বজনের নিকট নিজেই অপমানিত-অপদস্থ হইয়া আর সর্বোপরি নিজেই বন্ধুমহলখানিতে বিতাড়িত আর দলছাড়া হইবার আলামত দেখিয়া এক্কেবারেই ঝিম মারিয়া গেলেন।
কিইনা একখানি জটিল কুটপরিকল্পনা আর ফাঁদ পাতিয়াছিলেন হরিদাস!!! কস্মিনকালেও যদি জানিতেন যে তাঁহার এই ফাঁদ, তাঁহাকেই বোকা বানাইয়া শিকার করিবে??? তাহা হইলে তো ফাঁদ পাতিবার পূর্বেই ‘নাক খপ্তা’ দিয়া লইতেন গোটা কুড়িবার। ইস্স রে!!! কি জ্বলুনিটাই না যে জ্বলিতেছে …. উপায় নাই …. নাহি নিভিতেছে জলে, নাহিবা ‘বার্নলে’ !!!
রাউন্ড – ৩ >>
Please post round 3 quickly…