বেশ কিছু যাবৎই হরিদাস পালের ইহধামের কার্যক্রমে ব্যর্থতার চুড়ান্ত হইতেছে। হরিদাস পাল ইদানিং প্রত্যহ প্রত্যুষে ঘুম হইতে জাগ্রত হইবা মাত্রই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আর অর্জুনের সহিত জরুরী সভায় বসিতেছেন। পরামর্শ মোতাবেক প্রায়শই হরিদাস পাল জনৈক মৃত্যুঞ্জয় স্যানালের পশ্চাৎদেশের প্রতি আগ্রহ দেখাইতেছেন। চেষ্টা চরিত্র চালাইতেছেন কিভাবে মৃত্যুঞ্জয় স্যানালের উক্তদেশে নিজের সংগ্রহে থাকা মুলি, কাঞ্চন, তল্লা কিংবা নলা যে কোন জাতের একখানি বাঁশ (গাঁইট সহই) সম্প্রদান করিবেন। কিন্তু হরিদাস পালের বিধিবাম, সেই শুভকর্মের সাধনে গোল বাঁধিতেছে নিয়মিতই। তো ইত্যকার ঘটনাপ্রবাহ হইতে কিছু ঘটনাখন্ড বিগত বেশ কিছুদিন যাবৎই এ ধরাধামের একমাত্র সহজলভ্য আর পাকড়াওযোগ্য ডন এবং এই আসরের পালাকার ‘রিং’ – দ্য ডন এর মগজের শিরা-উপশিরায় প্রতিনিয়তই ‘গোল্লাছুট’ খেলিতেছিলো। অদ্যকার রাত্রির দ্বিপ্রহরেই ‘গোল্লা’ হুট করিয়া বেমাক্কা ছুট দিয়া জনসম্মুখে প্রকাশিত হইয়া গেলো।
বিশেষ সতর্কবার্তাঃ লেখার পরবর্তী অংশে আমার পরিচিত – অপরিচিত – স্বল্পপরিচিত কিংবা যে কারোরই জীবনী কিংবা কর্মধারার সাথে মিলে গেলে তা পুরোটাই ‘ফিঙ্গে’তালীয়। অতএব এই লেখা পড়ে উত্তেজিত কিংবা নিস্তেজিত হয়ে কোন রকম ঘটন-অঘটনের দায় পুরোটাই পাঠকের একান্ত নিজস্ব। মনে চাহিলে পড়িতে থাকুন নতুবা চরম কিছু বাক্যের অব্যক্ত উচ্চারনে মনে প্রশান্তি আনয়ন পূর্বক অত্র স্থান এক্ষুনি ত্যাগ করুন।
রাউন্ড – ১ >>
এ সুবিশাল বঙ্গদেশের উত্তরবঙ্গ নিবাসী হরিদাস পালের জীবনকালের শুরু বড়ই বিচিত্রময়। আর তাই আমাদের “গোল্লা” ছুটিলো হরিদাসপালের ইহকালের সূর্যোদয় হইতেই। ঘটনা প্রায় এক কুড়ি বৎসর পূর্বে। বিশিষ্ট স্বাস্থ্যসেবক পিতৃদেব এবং তদুর্ধ্ব বিশিষ্ট স্বাস্থ্যসেবিকা মা জননীর সংকরায়নের ফলে ধরাধামে আসিলেন আমাদের হরিদাসপাল এবং বছর পাঁচেক বাদেই আমন্ত্রিত হইলেন হরিদাসেরই অনুজ ভজহরি পাল। ভজহরি অদ্য হরিদাসেরই ছত্রছায়ায় গোকূলে বাড়িতেছেন। সে এক বিরাট ইতিহাস, আগামীতে না হয় কোন একদিন কোন এক আসরে এই সুবিশাল ইতিহাস সবিস্তারে পেশ করিবো। তো আমাদের হরিদাস তাঁর অনুজের জন্মের কিছুকাল বাদেই হইলেন মাতৃহারা। থামুন! আহা-উহু-ইসস করিয়া উঠিবেন না। শাস্ত্রে মানা আছে। আগে পুরোটা জানুন তারপরে যত্ত খুশি উহু-আহা-ইসস শব্দের ফুলঝুরি নিজের দুইপাটি দন্ত, দুইখানা পুরু ঠোঁট আর আড়াই ইঞ্চি জিহ্বার সহয়তায় ছুটাইবেন। আসল ঘটনা হইতেছে হরিদাসের মা জননীর বিশিষ্টতা, বাবার বিশিষ্টতার তুলনায় কিঞ্চিৎ বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হইতেই এদেশীয় জনতার সেবক আমলারা বিশেষ নির্দেশ বলে হরিদাসের মা জননীকে দেশের শাসকদের সেবা গ্রহনের সুবিধার্থে শাসনব্যবস্থার একেবারে কেন্দ্রে, মানে রাজধানীস্থ সরকারী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে বদলি করিয়া দিলেন। ফলাফল হইলো ভয়াবহ। বয়েসে একেবারে কচি, দুই দু’খানি নাড়িছেঁড়া ধনকে উত্তরবঙ্গে পিতৃদেব এর নিকট রাখিয়া মা জননীকে আসিতেই হইলো চাকুরী বাঁচাইতে। চাকুরী তো বাঁচিলো, সংসারে অর্থাভাবও সৃষ্টি হইলো না। কিন্তু যাহার অভাব দেখা দিলো হরিদাস পাল আর ভজহরি পাল এর চরিত্রগঠনের স্বর্ণসময়ে তাহা বোধহয় আর মিটিলো না। মাতৃস্নেহের পরম পরশ হারাইয়া ভজহরি আর হরিদাস পাল বাড়িয়া উঠিলো পিতৃদেবের কঠোর শাসন আর শৃংখলার মাঝে। মাতৃহারা শিশু যেমন মমতা কি জিনিষ বুঝিতে শেখে না, আচার-আচরনে সৌজন্যতা আর কোমলতার পাঠ ও তাঁদের ভাগ্যে জোটে না। ফলাফল হইলো এই যে, আমাদের হরিদাস পাল কঠোর নিয়ম আর শাসনের বেড়াজাল বৈধ-অবৈধ নানান পন্থায় ছিন্ন করার কৌশল আবিষ্কার করিয়া বসিলেন। শিশুসুলভ কোমলতায় যে বয়েসে সকলের স্নেহ মমতা আর ভালোবাসা পাইবার কথা সেই বয়েসেই উনি তিরস্কৃত আর শায়েস্তা হইতে লাগিলেন সর্বজনে, সর্বত্র। অবশ্য ওনাকে ভজাইয়া যাঁহারা স্বার্থসিদ্ধি করাইবে বলিয়া বিভিন্ন রকমের তৈলাক্ত … পদার্থের আর চাটুকারিতার প্রয়োগ ঘটায় তাঁহারাই ওনার বিশেষ পছন্দের আর আপনারজন। তো প্রকৃতির অমোঘ নিয়মেই বাড়ন্ত হরিদাস পালের চারিত্রিক, সামাজিক এবং মানসিক সংগ্রহশালায় জমিতে লাগিলো অজস্র প্রজাতির ও আকৃতির বাম্বু থুড়ি ‘বাঁশ’। যাহার উন্মত্ত প্রয়োগ উনি কারনে-অকারনে জাতি-ধর্ম-বর্ন-গোত্র না মানিয়া যথা-তথাই করিতে লাগিলেন এবং স্বীয় মুখমন্ডলের পেশীর মৃদুমন্দ দুলুনিতে ঈষৎ বক্র হাস্যোজ্জ্বল এবং কচিগোলাপ রংয়ের একখানি চেহারা ধারন করিতে লাগিলেন। যদিওবা কদাচিৎ বাঁশসমূহ ভুল বশতঃ পাথুরে দেয়ালে কিংবা উনার আচরনের ধরনে পূর্বেই সর্তক ব্যক্তিদের ঢাল/বর্ম প্রভৃতিতে প্রযুক্ত হইয়া বুমেরাং স্বরূপ ফিরিয়া আসিয়া নিজেরই পশ্চাৎদেশে প্রযুক্ত হইতেছিলো তথাপি ওনার এই সুখাবেশ/সুখানুভূতি কৃত্রিমতা হইলেও বজাইয়া থাকিলো।
মাথার ওপর দিয়ে গেল