‘বন্টু-মিন্টুর আড্ডা’ শিরোনামে লিনাক্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম উবুন্টু ও লিনাক্স মিন্ট ব্যবহারকারীদের একটি আড্ডা ২৩ জুলাই বিকেল ৩.৩০ মিনিট থেকে রাত ৮.০৫ মিনিট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে। এতে উবুন্টু ও লিনাক্স মিন্ট ব্যবহারকারীরা ও ব্যবহার করতে ইচ্ছুক প্রায় দুই শতাধিক লিনাক্সপ্রেমী অংশ নেন। আড্ডায় লিনাক্স কী, লিনাক্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের সুবিধা কী, লিনাক্সকে কীভাবে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া যায় ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি উবুন্টু ও লিনাক্স মিন্ট ব্যবহারকারীরা নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। আড্ডার শুরুতেই জে টি এস ম্যুর – এর ‘রেভুল্যুশন ওএস’ তথ্যচিত্রটি প্রদর্শন করা হয়, যাতে ওপেনসোর্সের দর্শন খুব সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন জনাব মুনির হাসান, রিফাত-উন-নবী, লেখক রণদীপম বসু, মাহে আলম খান, মিয়া মোহাম্মদ হুসাইনুজ্জামান শামীম, হাসিন হায়দার, মানচুমাহারা প্রমুখ। বিশিষ্টজনেরা আড্ডায় অংশনিয়ে নিজেদের লিনাক্স ব্যবহারের অভিজ্ঞতার বর্ননা দেন। এখন উবুন্টু ব্যবহারকারীরা তাদের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করছেন। মুনির হাসান তাঁর বক্তব্যে জানালেন মুক্ত সোর্সের সম্ভাবনার কথা এবং তাতে আমাদের প্রতিভার কিভাবে বিকাশ হতে পারে। তিনি ওপেন সোর্স নিয়ে কার্নিভালের মতো অনুষ্ঠান করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন। এছাড়াও আড্ডায় নতুন লিনাক্স ব্যবহারকারীরদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন অভিজ্ঞ লিনাক্স ব্যবহারকারীরা। আড্ডার পাশাপাশি লিনাক্স ও মিন্টের অতিরিক্ত সফটওয়্যার ও আপডেটসহ উবুন্টু বাংলাদেশ সংকলিত ডিভিডি এবং উবুন্টু ও লিনাক্স মিন্টের লোগোসহ টি-শার্ট সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিলো, আগ্রহীরা এগুলো শুভেচ্ছা মূল্যের বিনিময়ে সংগ্রহ করেছেন। আড্ডার আয়োজন করে উবুন্টু বাংলাদেশ, কারিগরি সহায়তায় ছিল অঙ্কুর-আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এবং প্রচার সহায়তায় ছিল আমাদের প্রযুক্তি, প্রজন্ম ফোরাম, সচলায়তন এবং লিনাক্স মিন্ট বাংলাদেশ। অঙ্কুর-আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন আড্ডার চা-বিরতিতে অংশগ্রহনকারীদের মাঝে বিনামূল্যে তাঁদের লোকালাইজেশনকৃত ভিএলসি প্লেয়ার, মজিলা ফায়ারফক্স এবং ওপেনঅফিসের সিডি ও মজিলা ফায়ারফক্সের লোগো সম্বলিত ব্যাজ বিনামূলে বিতরন করে। জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল ‘চ্যানেল আই’ অনুষ্ঠানটি নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে।
আড্ডার বিক্ষিপ্ত ধারা বিবরনীঃ
বন্টু-মিন্টুর আড্ডায় সবাইকে স্বাগতম! আড্ডার নির্ধারিত সময় ৩.৩০ মিনিট হলেও দুপুর আড়াইটার পর থেকেই অনেকে আসতে শুরু করেছেন। আয়োজকরা অবশ্য এর আগেই চলে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে। আড্ডার দৃশ্যগুলো সরাসরি ইন্টারনেটে সম্প্রচার করা হচ্ছিল এখানে।
বিকেল ৩.৩০ মিনিট
মোটামুটি ৬০-৬৫ জন ইতোমধ্যে উপস্থিত হয়েছেন। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয়েছে আড্ডা। উন্মাতাল তারুণ্য (শাবাব মুস্তাফা) আর অয়ন খানের মনমাতানো উপস্থাপনায় দর্শকদের কয়েকজন মুক্ত সফটওয়্যার কী সে সম্পর্কে তাদের মত ব্যক্ত করলেন। এখন দেখানো হচ্ছে জে এস টি মুরের ওপেন ও ফ্রি সোর্স নিয়ে তৈরি করা তথ্যচিত্র “রেভুল্যুশন ওএস”।
বিকেল ৪:৫০ মিনিট
রেভুল্যুশন ওএস মুভিটি প্রদর্শন চলছে। সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে মুভি উপভোগ করছেন যদিও এটি আসলে ডকুমেন্টারি। অনেক কাঠখোট্টা। এরই মধ্যে আপডেট আসলো অভ্যর্থনা থেকে জানা গেলো ৩৫০ জনের বেশি রেজিস্ট্রেশন করেছেন দর্শক! আমাদের ধারণা অতিক্রম করে যাচ্ছে দর্শক সমাগম। অনেকই হলের ভেতর দাঁড়িয়ে আছেন।
বিকেল ৫:৩৫ মিনিট
ডকুমেন্টারি মুভিটি প্রায় শেষ। এবার শুরু হচ্ছে সবার সাথে মিথস্ক্রিয়া। সবাই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন বোরিং ডকু-মুভিটি শেষ হবার জন্য।
বিকেল ৬:০০ মিনিট
এখন উবুন্টু ব্যবহারকারীরা তাদের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করছেন। একজন ব্যবহারকারী জানালেন মিন্ট ব্যবহার করতে গিয়ে একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে তিনি প্রিন্টার ভেঙ্গে ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে দেখলেন এর সমাধান খুব সহজ। এখন বক্তব্য রাখছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিয়া মো. হোসাইনুজ্জামান, মানে আমাদের শামীম ভাই। মুনির হাসান তাঁর বক্তব্যে জানালেন মুক্ত সোর্সের সম্ভাবনার কথা এবং তাতে আমাদের প্রতিভার কিভাবে বিকাশ হতে পারে। তিনি ওপেন সোর্স নিয়ে ‘কার্নিভাল’ এর মতো অনুষ্ঠান করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন। চ্যানেল আই এর প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহে এসেছেন তারাও অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু মিডিয়াতে প্রচার করবেন।
বিকেল ৬:৩০ মিনিট
চা-বিরতি চলছে। যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন তারা তাদের টোকেন দেখিয়ে চা খাচ্ছেন। ভার্চুয়ালি পরিচিত কিন্তু কখনও দেখা হয় নাই, এমন অনেকের সাথে কথা বলে ভালোই লাগছে। উবুন্তু/মিন্ট কাস্টোমাইজড ডিভিডি সংগ্রহের হিড়িক চলেছে। ডিভিডি বাক্সপেটরা, সেই সাথে টাকার হিসেব এবং দর্শক-ক্রেতাদের সাথে মোলায়েম ও সহযোগীসুলভ ব্যবহার সব একসাথে করতে গিয়ে যন্ত্র প্রকৌশলি রায়হান চৌধুরী নিপুনের অবস্থা দেখার মতো। তবু তার মুখে হাসি লেগেই আছে। বোঝা যাচ্ছে তিনি প্রথম বারের সামলাচ্ছেন তো হ্যাপা তাই একটু আধটু …। পাশেই রয়েছে পছন্দের টি-শার্ট। ওখানে শাহরিয়ার আর ওঁর সহকারীদের ও দর্শক-ক্রেতাদের সামলাতে সামলাতে কাহিল দশা। ছাত্র, শিক্ষক, ব্লগার, ফোরামার এবং নানা পেশাজীবীর এক অভুতপূর্ব সমাবেশ ঘটেছে। বিভিন্ন আইটি প্রফেশনালরাও এসেছেন। তাদের সাথে তাদের ভক্তরাও দেখা সক্ষাৎ করে নিচ্ছেন। এক কথায় চমৎকার একটি মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে আড্ডাটি।
সন্ধ্যা ৭:০৫ মিনিট
অঙ্কুর আইসিটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রায় ১০০টি সিডি দর্শকদের দেয়া হয়েছে। এতে রয়েছে বাংলা সংস্করণের ওপেন অফিস, ফায়ার ফক্স, ভিএলসি ইত্যাদি সফটওয়্যার।
সন্ধ্যা ৭:২০ মিনিট
এখন চলছে প্রশ্লোত্তর। দর্শকরা প্রশ্ন করছেন, উত্তরও আসছে দর্শকদের মধ্য থেকেই। অংশগ্রহণকারীদের অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। সবাই কিছু না কিছু বলতে চান। কেউ তার অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন, কেউ সমস্যার কথা জানাচ্ছেন আর কেউ সমাধান দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে বেশ প্রাণবন্ত আড্ডা হচ্ছে। গৌতম রয় আর লেনিন ঠায় বসে থেকে লাইভ ব্লগিং আর স্ট্রিমিং করছেন।
সন্ধ্যা ৭:৫০ মিনিট
মিলনমেলায় সমাপ্তিটানার সময় অনেক আগেই উত্তীর্ন হয়েছে। আসর ভাঙ্গার সুর শোনা যাচ্ছে। আড্ডা প্রায় শেষের পথে। সবাইকে ফিডব্যাক ফরম সরবরাহ করা হয়েছে।
সন্ধ্যা ৭:৫৫ মিনিট
আড্ডার সমাপনী বক্তব্যে উবুন্টু বাংলাদেশের এই আয়োজনের সমন্বয়ক সাজেদুর রহিম জোয়ারদার যিনি রিং নামেই বেশী পরিচিত, বক্তব্য রাখলেন। অভ্যর্থনায় অনুপম, শাহরিয়ার, গাজী ডিভিডির স্টলে নিপুন, টিশার্টে শাহরিয়ার সহ অনেকেই, চা-চক্রে রিংকু আর গাজী সহ পুরো অনষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় যে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী আমাদের সহযোগীতা করেছেন তাঁদের সবাইকে আমার লাল সালাম। এঁদের সক্রিয় সহযোগীতা ছাড়া কোনভাবেই এতবড় আয়োজন স্বার্থক করে তোলা সম্ভব ছিলো না। পুরো আড্ডায় আমাদের মাঝে ছিলেন ‘উবুন্টু বাংলাদেশ’ এর এডমিন রাসেল জন ভাই। উনি তাঁর সুচিন্তিত পরামর্শ আর বিভিন্ন কাজে সহযোগিতার মাধ্যমে এই আড্ডাকে সফল করে তুলতে বিশেষ অবদান রেখেছেন। রাসেল ভাই কে আন্তরিক ধন্যবাদ।
রাত ৮:০৫ মিনিট
শাবাব মোস্তফা শুরুটা করেছিলন, ইতিটাও তিনিই টানলেন। বিদায় বন্ধুরা এবারের ন্যায়, দেখা হবে আগামী ‘ম্যাভেরিক মিরক্যাট” (উবুন্টু ১০.১০) এর রিলিজ পার্টিতে। ধন্যবাদ সবাইকে।
বন্টু-মিন্টু’দের এ আড্ডা দেশের বাইরে থেকে আবির সাদিক, অভ্রনীল দা সহ অনেকেই লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে উপভোগ করেছেন। এমনকি দেশের ভেতরে থেকেও যারা উপস্থিত হতে পারেননি যেমন অনুপ দেবনাথ, সারিম খান উপভোগ করছেন এ অনুষ্ঠান। অভ্রনীলদার কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ থাকবো এজন্য যে, আমাদের আড্ডার জন্য পোষ্টার, ব্যানার আর ফেস্টুনগুলো তাঁরই ডিজাইনকৃত। এছাড়াও বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে তিনি আমাদের চিরকৃতজ্ঞতার বাঁধনে আবদ্ধ করেছেন।
আড্ডার ছবি গুলো পাবেন মোটামুটি ধারাবাহিকভাবে এখানে
কৃতজ্ঞতায়ঃ এই লেখাটির অনেকটাই গৌতমদার লাইভ ব্লগিং লগ থেকে কাটছাট করে লিখেছি। আমার এই ল্যাপিতেই তো উনি আর লেনিন ভাই স্ট্রিমিং আর ব্লগিং করেছেন তাই লগটা এখানেই পেয়ে একটু কাটছাঁট করে আর কিছু সংযোজন করে পোষ্ট দিয়ে দিলাম।
রিং দা,
আপনার লেখা update বেশ ভালো হযেছে. আমাকে সেদিন আড্ডা থেকে বেরিয়ে কুমিল্লা যেতে হযেছিল বলে চা বিরতির পর চলে আসতে হযেছিল. 😦
কিন্তু মনটা পরে ছিল আড্ডায়.
আমি মুঠো ফোনে লাইভ update জানার জন্য ঘাটাঘাটি করেছি, তবে সম্পূর্ণ তা পাইনি. আজ আপনার লেখায় তা পেলাম.
বি:দ্র: আপনার সাথে আমার দেখা হেছে আড্ডায়, তখনও আপনাকে আমি চিনি না. আমি আমার বউ কে নিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু দকোমেন্তারী দেখার শেষ দিকে তার মাথা ধরে তাকে রিক্সায় তোলে দিয়ে আবার হলে ঢুকতে গিয়ে আপনার বাধা দরজায়: registration করেছেনতো?
হা বলার পর আপনি আমাকে ঢুকতে দেন. 🙂
ভাই করার কিছু ছিলো না। আপনার হাতে কোন টোকেন বা কোন কাগজ ছিলো না। ওগুলো ছাড়া ধরে নেয়া যায় যে আপনি একজন অতিথি দর্শক। আর দর্শকদের জন্য “চা-টোকেন”টা না পেলে পরে ঝামেলায় পড়বেন ওটা চিন্তা করেই আপনাকে আটকেছিলাম।
বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকার এই একটা সমস্যা… দেশের দারুণ দারুণ জিনিসগুলো মিস হয়ে যায়…
ইনশাল্লাহ দেখা হবে নিশ্চয়ই, এপারে বা ওপারে……..
ম্যাভেরিক মিরক্যাট এ দেখা হবে!
ভালো লাগল।
দেখা হলেও হতে পারে। তবে আমার সাথে না হলেও আরো অনেককেই পাবেন এ আয়োজনে।
😦 ahare! Onek kichu e miss korlam!
রিং ভাই এর কথার কনো না কনো জায়গায় বিদায়ের সুর থাকে।
বিদায়ের বিউগল ধ্বনি আরো বছর চারেক আগে থেকেই বাজছে…………….সময় আমার অপেক্ষায়, আমি হেথায়।
আপনার ব্লগটার খোঁজ এখনই পেলাম। আড্ডার আপডেটটা চমৎকার হয়েছে রিং ভাই।
অভিনন্দন আপনাকে। সাথে কিছু কৃতজ্ঞতা।
আর এই ব্লগটা আমার নিচের Linktionary তালিকায় অচিরেই বন্দী হয়ে যাচ্ছে কিন্তু !
http://ranadipam.wordpress.com/linktionary/
আমি নিয়তির হাতে বন্দী, আমার লেখাগুলো তাই আপনার লেখার ন্যায় মাধুর্যপূর্ণ আর সাবলীল হয়নি। তবুও যে আপনার প্রশংসা পেলাম এই তো আমার পরম পাওয়া।